হুমায়ন কবির মিরাজ, বেনাপোল
“মাঠজুড়ে হলুদ ফুল, রোদে ভেজা দিন, মাটির বুকে স্বপ্ন ফেরে, কৃষকের চোখে চিন।”এই ছন্দের মতোই বাস্তব চিত্র এখন যশোরের শার্শা উপজেলার মাঠজুড়ে। শীতের নরম রোদে বিস্তীর্ণ ফসলি জমিন ঢেকে গেছে সরিষার হলুদ ফুলে। দিগন্তজোড়া মাঠে বাতাসে দুলছে সরিষা গাছ, ফুলের ফাঁকে ফাঁকে মৌমাছির গুঞ্জনে যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে গোটা জনপদ। প্রকৃতির এই অপূর্ব দৃশ্যের সঙ্গে মিলেছে কৃষকের মুখে প্রশান্তির হাসি এ শুধু সৌন্দর্যের গল্প নয়, বরং সম্ভাব্য লাভের আশাবাদ।
একসময় লোকসানের কারণে সরিষা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন শার্শার অনেক কৃষক। কিন্তু গত মৌসুমে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় আবারও সরিষা চাষে ফিরেছেন তারা। চলতি মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের সক্রিয় সহযোগিতায় বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর শার্শায় প্রায় ৫ হাজার ৯২৯ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এতে উৎপাদন হয় ৮ হাজার ৯২৯ মেট্রিক টন সরিষা। চলতি বছরে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৫০২ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার সমপরিমাণ জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে, যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের।
সরেজমিনে শার্শা, বাগআঁচড়া, বেনাপোল, পুটখালি, বাহাদুরপুর, নিজামপুর, ডিহি ও লক্ষণপুর ইউনিয়নের মাঠ ঘুরে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ যেন হলুদের গালিচা। মৌমাছিরা ব্যস্ত মধু আহরণে, আর কৃষকের চোখে-মুখে ভবিষ্যৎ লাভের আশা স্পষ্ট।
শ্যামলাগাছী গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুই বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষে তার প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। গাছের বৃদ্ধি ও ফুলের অবস্থা দেখে তিনি আশাবাদী এবার ফলন ভালো হবে এবং লাভও মিলবে।
বালুন্ডা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, সরিষা চাষে ঝুঁকি তুলনামূলক কম এবং বাজারে এর চাহিদা সবসময় ভালো। তাই প্রতি মৌসুমেই তিনি সরিষা চাষ করেন।
বেনাপোলের নারায়নপুর বৃদ্ধ কৃষক হাসেম আলি বলেন, উন্নত জাতের সরিষা চাষের ফলে জমির উর্বরতা বাড়ছে এবং পরবর্তী বোরো মৌসুমে সারের খরচ কম লাগছে। এতে একই জমিতে দ্বিগুণ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
গোগা গ্রামের কৃষক নাজমুল বিশ্বাস বলেন, নতুন করে উন্নত জাতের বীজ নিয়ে আবাদ করেছেন তিনি। গাছের অবস্থা দেখে ধারণা করছেন, এবার ফলন আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, চলতি মৌসুমে বারি ও বিনা উদ্ভাবিত বিভিন্ন উচ্চফলনশীল জাতের সরিষার বীজ কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এসব জাত মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফলন দেয়, ফলে সরিষা কাটার পর একই জমিতে বোরো ধান আবাদ করা সম্ভব হয়। এ কারণেই কৃষকরা সরিষাকে লাভজনক ফসল হিসেবে বিবেচনা করছেন।
তিনি আরও বলেন, ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা আবাদ বাড়ানো সময়ের দাবি। কৃষি বিভাগের সহায়তা ও অনুকূল আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে শার্শায় সরিষা চাষ আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.