রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়।
এর অংশ হিসেবে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ছিল শোকের সঙ্গে সাধারণ ছুটি। সারাদেশ যখন শোকে স্তব্ধ, ঠিক তখনই খুলনা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) ঝুমুর বালার নেতৃত্বে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী দাপ্তরিক কার্যক্রম চালিয়েছেন—যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শোক দিবসে ওয়াসা ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ছিল না, উত্তোলন করা হয়নি কালো পতাকাও।
কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বুকে দেখা যায়নি কালো ব্যাজ। এমনকি বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে কোনো শোকবার্তাও টানানো হয়নি।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বিষয়টি জানতে পেরে একাধিক গণমাধ্যমকর্মী ওয়াসা ভবনে প্রবেশ করেন।
সেখানে কর্মকর্তাদের স্বাভাবিক দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিএমডি ঝুমুর বালা বলেন, “সরকারি ছুটি আছে তাতে কী হয়েছে? কারো খাওয়া-দাওয়া কি বন্ধ আছে?”
এ সময় আরও কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে একাত্তর টেলিভিশনের রিপোর্টার রাজু হাওলাদার ওয়াসা ভবনে প্রবেশ করলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে বাধা দেন।
অভিযোগ রয়েছে, তাকে একটি কক্ষে প্রায় এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়, ক্যামেরা ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয় এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ ও গালমন্দ করা হয়।
খবর পেয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকরা নির্বাহী আদেশ অমান্য করে অফিস পরিচালনা এবং একজন সাংবাদিককে আটকে রাখার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ওয়াসার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্প্রতি খুলনা ওয়াসায় জনবল নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওই নিয়োগে পছন্দের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে এমডির নির্দেশনায় ডিএমডি ঝুমুর বালাসহ কয়েকজন কর্মকর্তা গোপনে কাজটি সম্পন্ন করতেই সাধারণ ছুটির দিনেও অফিস করেন। ওই দিন কর্মকর্তাদের জন্য একটি অভিজাত হোটেল থেকে আনা হয় প্রায় ৩৫ প্যাকেট খাবার।
এ বিষয়ে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি প্রথমে এক সাংবাদিককে বলেন, “ছুটির দিনে কেউ অতিরিক্ত কাজ করলে তাতে দোষের কিছু নেই।”
তবে কেন রাষ্ট্রীয় শোকের দিনে এমন কাজ—এই প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক ফোন করলেও তিনি আর কল রিসিভ করেননি।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “সাধারণ ছুটির দিনে দাপ্তরিক কাজের আড়ালে ব্যক্তিগত ভাগ-বাটোয়ারার বিষয় আছে কি না—সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।”
উল্লেখ্য, ডিএমডি ঝুমুর বালার বিরুদ্ধে অতীতেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে বরিশালের উজিরপুরে ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার ভাই সঞ্জিব বালার মাধ্যমে বালু উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে বাগেরহাট জেলা পরিষদে কর্মরত অবস্থায় সামান্য ক্ষয়ক্ষতিকে ২০ লাখ টাকা হিসেবে দেখানোর অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধানের মুখে পড়েন। এরপর তাকে খুলনা ওয়াসায় বদলি করা হয়।
সূত্র জানায়, খুলনা ওয়াসায় বদলির পর তিনি আওয়ামী ঘরানার এক নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফেজ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) করতে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।
এই সিন্ডিকেটে ওয়াসার সাবেক সচিব ও বর্তমান বোর্ড সদস্যসহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম আলোচনায় এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ২২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পে বড় অঙ্কের লেনদেন হয়েছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়েও।
রাষ্ট্রীয় শোক উপেক্ষা, সাংবাদিক হয়রানি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ—সব মিলিয়ে খুলনা ওয়াসাকে ঘিরে সৃষ্ট বিতর্কের দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.