নওগাঁ প্রতিনিধি
গলদা চিংড়ি মাছ মূলত খুলনা অঞ্চলে চাষ হওয়া মাছ। প্রথমবারের মতো নওগাঁর পুকুরে মিশ্র পদ্ধতি সেই গলদা চিংড়ি মাছের চাষ শুরু হয়েছে।
নওগাঁর সদর উপজেলার শৈলগাছি ইউনিয়নের দীঘিরপাড় গ্রামের শিক্ষার্থী ও মাছ চাষী রাজু তার পুকুরে মিশ্র পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি মাছ চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাছ চাষীরা গলদার চাষ দেখতে রাজুর পুকুরে ভিড় করছেন। ইতোমধ্যে রাজুর দেখাদেখি ওই এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার ৩০ থেকে ৪০ জন মাছ চাষী গলদা চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন।
রাজু সরদার দীর্ঘদিন ধরেই মিশ্র পদ্ধতিতে কার্প জাতীয় মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত। তবে প্রচলিত চাষে লাভ সীমিত হওয়ায় রাজুর মাথায় নতুন কিছু করার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় গত জুন মাসে স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর কৃষি ইউনিটের মৎস্য খাতের আওতায় “উত্তম ব্যবস্থাপনায় গলদা চিংড়ি চাষ” শীর্ষক একটি প্রদর্শনীর সুযোগ আসে তার হাতে।
প্রদর্শনীর আওতায় তাকে ৫০০ পিচ গলদা চিংড়ির জুভেনাইল (রেনু) সরবরাহ করা হয়। অনেকের কাছে বিষয়টি তখনও ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও রাজু সরদার থেমে থাকেনি।
নিজের উদ্যোগে আরও ১ হাজার পিচ জুভেনাইল সংগ্রহ করে কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে সমন্বিত ভাবে গলদা চিংড়ি চাষ শুরু করেন। রাজু সরদারের পুকুরে নিয়মিত পানির গুণগত মান পরীক্ষা, সুষম খাদ্য সরবরাহ, পুকুরের তলদেশ পরিষ্কার রাখা-সবকিছুই চলে পরিকল্পিত ভাবে।
তিনি জানান “গলদা চিংড়ি খুবই সংবেদনশীল। পানির মান ঠিক না থাকলে সমস্যা হয়। তাই নিয়মিত নজরদারি করেছি।” এই যত্নের ফল মিলতেও বেশি সময় লাগেনি। অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই গলদা চিংড়িগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে প্রতি কেজিতে ৭ থেকে ৮টি গলদা চিংড়ি পাওয়া যাচ্ছে, যা স্বাদু পানিতে চাষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সন্তোষজনক ফলাফল।
রাজু সরদার আশাবাদী, তার পুকুর থেকে মোট ১২০ থেকে ১৩০ কেজি গলদা চিংড়ি উৎপাদন হবে। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি গলদা চিংড়ির দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। সে হিসেবে মোট বাজার মূল্য দাঁড়াতে পারে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কার্প মাছের পাশাপাশি গলদা চিংড়ি চাষ করায় একই পুকুর থেকে দ্বিগুণ লাভের সুযোগ তৈরি হয়েছে রাজুর। ঝুঁকি থাকলেও সঠিক ব্যবস্থাপনায় তা শতভাগ সম্ভব হয়েছে।
স্থানীয় মাছ চাষী সাইফুল ইসলামসহ আরো অনেকেই জানান, এই অঞ্চলে গলদা চিংড়ি চাষ নিয়ে তাদের মধ্যে ভয় ও সংশয় ছিল। কেউ ভাবতেই পারেননি, খুলনা অঞ্চলের মাছ গলদা চিংড়ি নওগাঁর পুকুরে সফল ভাবে চাষ করা সম্ভব। রাজু সরদারের সাফল্য সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছে। তার পুকুর এখন যেন জীবন্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। রাজুর দেখাদেখি তারাও গলদা চিংড়ির চাষ শুরু করেছেন। বাজারে এই মাছের চাহিদা ও দাম ভালো হওয়ার কারণে বাজারকরণে কোন সমস্যা নেই। তাই আগামীতে তারা আরো বড় পরিসরে গলদা চিংড়ি মাছ চাষের কথা জানান।
উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর কৃষি ইউনিটের মৎস্য কর্মকর্তা মো: শাহরিয়ার হোসেন জানান মৌসুমী প্রতিনিয়তই দেশের কৃষি ও মৎস্যখাতকে আধুনিকায়নে কাজ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় জেলার মাছচাষীদের অল্প পরিশ্রমে ও স্বল্প খরচের মধ্যে ভিন্ন জাতের মাছ চাষ করে লাভবান করতেই পরীক্ষামূলক ভাবে গলদা চিংড়ি চাষ প্রকল্প শুরু করা হয়েছে।
মাছ চাষী রাজুর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো জেলায় গলদা চিংড়ি চাষ শুরু করা হয়েছে। রাজুর দেখাদেখি অনেক মাছ চাষী বর্তমানে গলদা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। মিশ্র পদ্ধতিতে গলদা চাষ করায় রাজুসহ অনেক মাছ চাষীরা গলদা চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছেন। আগামীতেও এই ধরনের নিত্যনতুন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার কথা জানান এই কর্মকর্তা।
সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো: বায়েজিদ আলম বলেন উত্তম ব্যবস্থাপনায় স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ নওগাঁর মৎস্য খাতে এক নতুন অধ্যায় যোগ করছে।
মিশ্র পদ্ধতিতে এই মাছ চাষ করে সহজেই অল্প জায়গাতেও ভালো আয় করা সম্ভব। স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বাড়বে মাছ উৎপাদন, শক্তিশালী হবে স্থানীয় অর্থনীতি।
ভবিষ্যতে আগ্রহী মাছ চাষীদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে জেলায় গলদা চিংড়ি চাষকে একটি সম্ভাবনাময় বিকল্প খাতে পরিণত করতে কাজ করার কথা জানান এই কর্মকর্তা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.