মোল্লাহাট(বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাটের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক গৃহ পরিচারিকা গৃহ মালিকের স্ত্রী কর্তৃক মধ্যযুগীয় কায়দায় সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার পিপাসা খান (৩৫) উপজেলার পদ্মডাঙ্গা গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথ খানের মেয়ে।একই উপজেলার দক্ষিণ আমবাড়ি গ্রামের বিষ্ণুপদ রায় তার ঢাকার বাসায় গৃহ পরিচারিকার কাজে নেওয়ার পর তার স্ত্রী রত্মা রায় কৃর্তক এ অত্যাচার ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সোমবার রাতে স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে মঙ্গলবার বিকালে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পিপাসা খানের ঘনিষ্ট জনেরা জানায়, প্রায় দুই বছর পূর্বে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি পিপাসা খান ও ছেলে বিদ্যুৎ (১৫) কে মোটা অঙ্কের বেতন দেওয়ার কথা বলে নিয় ঢাকার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে পিপাসাকে দিয়ে বাসার কাজ ও বিদ্যুৎকে দিয়ে বিষ্ণুপদ রায়ের অফিসের কাজ করান। তাঁদেরকে মাসিক বেতনে কোন টাকা না দিয়ে কেবল থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি পিপাসা খান বাসার কাজ ভালভাবে করতে না পারায় বিষ্ণুরায়ের স্ত্রী রত্মা রায় তাঁকে খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা, দেয় যাতে দ্বগ্ধ হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এর পরও সঠিকভাবে কাজ করতে না পারায় মাথার চুল কেটে ফেলাসহ অনুরুপ নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যাতে গ্রামের বাড়ি বা আপনজন কাউকে জানাতে না পারে সেজন্য কেড়ে নেওয়া হয় তার ব্যবহৃত মোবাইল। বন্ধিদশায় রেখে কেবল শ্রম নেওয়ায় মেতে ওঠে রত্মা রায় ও তার স্বামী বিষ্ণুপদ রায়। দীর্ঘ সময়ে সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতনে ভুগে জীবন্ত কঙ্গলে রুপ নিয়েছে পিপাসা খান। নিজে কথা বলার শক্তি টুকুও হারিয়ে ফেলায় নিশ্চিত মৃত্যু হবে শঙ্কায় দায় এড়াতে সিদ্ধান্ত নেয় বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার। কোন চিকিৎসা না করিয়ে বিষ্ণুপদ রায়ের ঘনিষ্ট জৈনক কৃষ্ণ আদুয়ার মাধ্যমে বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন সহ অবস্থা সংকটপন্ন হওয়ায় পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে প্রথমে মোল্লাহাট থানায় যায় থানা পুলিশের পরামর্শে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। এখন মোল্লাহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
নির্যাতনের বিষয় বিষ্ণুপদ রায় মুঠোফনে জানান, এ ধরনের ঘটনা মিথ্যা ভিত্তিহীন। গ্রামে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাকে এবং আমার পরিবারকে ফাঁসানোর জন্য আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছে। পিপাসা আমার ঢাকার পল্লবীর বাসায় ৬ তলায় আগুন ধরিয়ে দেয় এতে সে আহত হয়। আহত হলে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে অবস্থার উন্নতি হলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। গত ২ থেকে তিন বছর সে এবং তার ছেলে আমার বাসায় কাজ করে আসছিল তাদের আমি নিয়মিত মাসিক বেতন ও দিয়েছি।
মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জব্বার ফারুকী জানান, পিপাসা খান যখন আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হণ তখন তিনি কথা বলতে পারছিলেননা। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন সহ মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে। তার শরীরিক অবস্থা এতটায় দুর্বল যে তিনি দাড়াতেও পারছেন। আমরা সাধ্যমত তার চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
মোল্লাহাট থানার অফিসার ইনচার্জ সোমেন দাশ নবধারা কে বলেন, মারাত্মক অসুস্থ্য অবস্থায় তার কাছে পিপাসা খানকে নিয়ে এসেছিল। আমি তাৎক্ষণিক মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।ঘটনা যেহেতু ঢাকায় ঘটেছে সেহেতু আমার আইনগত কিছু করনিয় নেই।