সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার দেবহাটায় রাতের আঁধারে হেলমেট ও মাস্ক পরে একটি ‘জয় বাংলা’ স্লোগানধারী ছদ্মবেশী মিছিল বের করে জামায়াত ও শিবির সংশ্লিষ্ট একটি চক্র। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৬ জুলাই গভীর রাতে দেবহাটা উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের চিনেডাঙ্গা এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, মিছিলটি বাইরে থেকে দেখে সাধারণ রাজনৈতিক মিছিল মনে হলেও, ভেতরে ছিল ভিন্ন উদ্দেশ্য। মিছিলে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ছাড়াও ‘জামায়াত-শিবিরের চামড়া খুলে নেব’, ‘বিএনপির চামড়া খুলে নেব’—এমন উত্তেজনাকর স্লোগান দিয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়।
মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন জামায়াত নেতা সোলায়মান হোসেন ও ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ দেবহাটা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক মুজাহিদ বিন ফিরোজ। তারা দুজনসহ আরও অনেকে হেলমেট ও মাস্ক পরে নিজেদের চেহারা আড়াল করে মিছিলে অংশ নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মিছিলের ভিডিও ধারণ করে পরে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন মুজাহিদ।
প্রথমে অস্পষ্ট ভিডিও হলেও, পরে একটি স্পষ্ট ভিডিও ফাঁস হয়—যেখানে জামায়াত নেতা সোলায়মান ও ছাত্রনেতা মুজাহিদকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা কড়া সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বুধবার (২৩ জুলাই) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংগঠনের আদর্শ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মুজাহিদ বিন ফিরোজকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সংগঠনের সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আরাফাত হোসাইন বলেন, “দায়িত্বশীল পদে থেকেও তিনি একাধিকবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। আগেও সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু পরিবর্তন না আসায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
এদিকে দেবহাটা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মো. অলিউল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “সোলায়মান হোসেন আমাদের রোকন (সদস্য)। মিছিলে অংশ নেওয়া অন্যরাও জামায়াত সংশ্লিষ্ট বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
এলাকাবাসীর একাংশ দাবি করেছে, গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেবহাটা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ফাঁসাতে এই ‘নাটকীয়’ মিছিলের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে।