রাসেল আহমেদ,খুলনা
খুলনার তেরখাদা উপজেলায় এক উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে রাস্তার ধারের গাছপালা এখন অসংখ্য ব্যানার, সাইনবোর্ড এবং ফেস্টুনের ভারে নুয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক শুভেচ্ছা বার্তা থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন পর্যন্ত সবকিছুই পেরেক ঠুকে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে গাছের গায়ে। এই কর্মকাণ্ড শুধু গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিই ব্যাহত করছে না, বরং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরে আসার পরও কার্যকর উদ্যোগের অভাবে এই বেআইনি কাজটি বন্ধ হচ্ছে না। তেরখাদা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব লিয়াকত আলী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “রাস্তার ধারে শত শত গাছে যেভাবে পেরেক মারা হচ্ছে, এতে শুধু পরিবেশ নয়, জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে।”
এই প্রবণতা কেবল পরিবেশগত ক্ষতি করছে না, বরং অর্থনৈতিক ঝুঁকিও তৈরি করছে। স্থানীয় কাঠমিস্ত্রী মো. হাসিব জানান, পেরেকের কারণে কাঠের মান নষ্ট হয়ে যায় এবং সেই জায়গায় পচন ধরে, ফলে কাঠের দাম কমে যায়। স-মিল মালিক শওকত মোল্লা আরও গুরুতর সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বেশ কয়েকবার পেরেক থাকা গাছে করাত চালাতে গিয়ে আমাদের শ্রমিকরা বড় দুর্ঘটনায় পড়েছে। করাত ভেঙে আহতও হয়েছে অনেকে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাছের গায়ে পেরেক মারলে ফ্লোয়েম ও জাইলেম নামক খাদ্য ও পানি পরিবাহী টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে গাছের অভ্যন্তরীণ কার্যপ্রবাহ ব্যাহত হয় এবং ধীরে ধীরে গাছ শুকিয়ে মারা যায়। তেরখাদা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান এটিকে “পরিবেশগত বিপর্যয়” আখ্যা দিয়ে বলেন, “মানুষের মতো গাছেরও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকে। ছিদ্র করলে সেখানে পচন ধরে এবং একসময় গাছ মারা যায়।”
আইন অনুযায়ী, গাছের গায়ে পেরেক মেরে কোনো কিছু ঝুলানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এটি এখন একটি নিত্যদিনের চিত্রে পরিণত হয়েছে।
তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাতুল আফরোজ স্বর্ণা এই বিষয়ে অবগত আছেন এবং বলেছেন, “গাছে পেরেক ঠুকে ব্যানার বা সাইনবোর্ড ঝোলানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এটি গাছের স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহ নষ্ট করে দেয়। আমরা এ বিষয়ে প্রচারণা চালাব এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
পরিবেশবিদরা বলছেন, এখনই যদি গণসচেতনতা গড়ে না তোলা হয় এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে জলবায়ু পরিবর্তনসহ সামগ্রিক পরিবেশে। তাই তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।