রাসেল আহমেদ, খুলনা প্রতিনিধি
দীর্ঘদিন ধরে খুলনা জেলা পরিষদে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম মাহবুবুর রহমানকে নেত্রকোনা জেলা পরিষদে বদলি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়।
আদেশে বলা হয়, মাহবুবুর রহমানকে ১৩ আগস্টের মধ্যে নেত্রকোনা জেলা পরিষদে যোগদান করতে হবে। অন্যথায়, ১৪ আগস্ট থেকে তাকে বর্তমান পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া কর্মকর্তা হিসেবে গণ্য করা হবে।
এই নির্দেশনাটি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের স্বাক্ষরে জারি করা হয়।
আগেও বদলি হলেও থাকতেন খুলনাতেই
এর আগেও এস এম মাহবুবুর রহমানকে দুইবার বদলি করা হয়েছিল।
প্রথমবার ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বগুড়ায়, আর দ্বিতীয়বার ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হয়।
কিন্তু তিনি দুইবারই বদলির আদেশ অমান্য করে খুলনা জেলা পরিষদেই রয়ে যান। প্রভাবশালী কর্মকর্তার দাপট
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদসহ আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতার আশীর্বাদে মাহবুবুর রহমান গড়ে তুলেছেন একচ্ছত্র প্রভাব।
দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও তিনি ব্যবহার করেছেন প্রথম শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা। অনেকেই তাকে ‘জেলা পরিষদের অঘোষিত চেয়ারম্যান’ বলেও ডাকতেন।
অভিযোগ রয়েছে, তার প্রভাবের কারণে অন্য কর্মকর্তারা সব সময় চাপে থাকতেন। বদলির ভয়, চাপ এবং তদবিরের ভেতরেই চলতো তাদের কাজ।
তাকে ঘিরে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও রয়েছে। দাবি করা হয়, এসবের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন।
নিজেই করতেন পত্রিকা প্রকাশ, সাংবাদিকদের দমন
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, নিজের কর্মকাণ্ড ঢাকতে মাহবুবুর রহমান অবৈধভাবে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করতেন, যার সম্পাদকও ছিলেন তিনি নিজেই।
কোনো সাংবাদিক তার অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে, তিনি তাদের নানা উপায়ে হয়রানি করতেন।
গণঅভ্যুত্থানের পরও টিকেছিলেন পদে
চলতি বছরের ৫ আগস্ট খুলনা জেলা পরিষদে গণঅসন্তোষের মতো ঘটনা ঘটে। কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানালেও মাহবুবুর রহমানের পদে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
তিনি আগের মতোই অফিস করতেন এবং প্রভাব বজায় রাখেন।শেষ পর্যন্ত বদলি কার্যকর হবে সবশেষে স্থানীয় সরকার বিভাগের কঠোর অবস্থানে মাহবুবুর রহমানকে নেত্রকোনা জেলা পরিষদে বদলি করা হলো।
তবে এবারও তিনি আদেশ অমান্য করে খুলনায় থেকেই যাবেন কিনা, তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।