হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ এর দুই শিক্ষক’কে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কলেজের গভর্নিং বডি। বরখাস্তকৃত দুই শিক্ষক হলেন, কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রঞ্জন কুমার বসাক ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মার্শেল মালেশ চিরান।
সোমবার(২৯ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীনূর খান। কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের আগষ্ট পর্যন্ত ধারা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. তৌফিকুর রহমান’কে দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বরখাস্ত করা হয়। শুধু তাই নয়, আদালতের আদেশ অমান্য করে কলেজের সহকারী অধ্যাপক রঞ্জন কুমার বসাক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অবৈধভাবে দায়িত্ব নেন। সে সময় অবৈধ তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক মার্শেল মালেশ চিরান। এ দুইজন মিলে কলেজের ৫০ লাখ টাকার উপর আত্মসাৎ করেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে।
কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, অবৈধভাবে দায়িত্বে থাকার সময় তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কারো কথা বলার সাহস ছিল না। শিক্ষক ও কর্মচারীদের সাথে অসাধাচরণ ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবিদুর রহমান কলেজের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুর কাদিরকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট অডিট কমিটি গঠন করেন। সেখানে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এছাড়া পূর্নাঙ্গ তদন্তের জন্য বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীনূর খান চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারী এসিল্যান্ডকে প্রধান করে আবারো ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সেখানেও তদন্তে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়টি প্রমাণিত হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২৩ সেপ্টেম্বর গভর্নিং বডির সভায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, আমি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় আওয়ামী সরকারের দোসর ও কলেজের সে সময়ের গর্ভনিং বডির সভাপতি এমদাদুল হক মুকুল, তার ছেলে এমপি থাকার কারণে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমাকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেন। যার আইনি কোন ভিত্তি ছিল না। আর সেই সুযোগে বরখাস্তকৃত দুই সহকারী অধ্যাপক মিলে, নামে-বেনামে কলেজের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়ে আরো যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আলীনূর খান বলেন, অডিট কমিটির রিপোর্ট ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। সে প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে অভিযুক্তদের ২ বার এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু সন্তুষজনক উত্তর না পাওয়ায় গর্ভনিং বডির সিদ্ধান্তে দুই সহকারী অধ্যাপক’কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক রঞ্জন কুমার বসাক বলেন, অধ্যক্ষ তৌফিকুর রহমান কলেজটি খুবই সুন্দরভাবে পরিচালনা করছিলেন। তৎকালীন গভর্নিং বডির সভাপতি এমদাদুল হক মুকুল এর চাপ ও হুমকির মুখেই আমি বাধ্য হয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করি। তবে দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। সহকারী অধ্যাপক মার্শেল মালেশ চিরান, এখনো সাময়িক বরখাস্তের কাগজ হাতে পাইনি। কাগজ দেখে মন্তব্য করবো।