কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
এক সময় গ্রামবাংলার মাঠ-ঘাট, তালগাছ কিংবা সুপারির ডালে ঝুলে থাকা বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ছিল নিত্যচোখে পড়ার মতো দৃশ্য। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই শৈল্পিক নিদর্শন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। বাবুই পাখির বাসা এখন কেবল স্মৃতির পাতায় কিংবা শিশুদের ছড়ার বইয়ে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বিলুপ্তির মুখে পড়া এই পাখি ও তার বাসা হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন—পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, তাল, খেজুর, নারকেল প্রভৃতি প্রাচীন ও উঁচু গাছের অভাব, এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও যান্ত্রিকতার প্রভাব। এর ফলে বাবুই পাখির প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
কবি রজনীকান্ত সেন তাঁর ছড়ায় যেভাবে বাবুই পাখির শিল্পসত্তাকে তুলে ধরেছেন—“বাবুই পাখিকে ডাকি বলিছে চড়াই…”—তা আজ যেন শুধুই সাহিত্য। বাস্তবে গ্রাম-বাংলার তালগাছে ঝুলে থাকা বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না।
সরেজমিনে কালাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বে যেখানে রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ তালগাছে বাবুই পাখির বাসা দেখা যেত, এখন সেসব গাছই বিলুপ্ত প্রায়। স্থানীয় কৃষক তোফাজ্জল মণ্ডল বলেন, “ছোটবেলায় দেখতাম তালগাছে ঝুলছে বাবুই পাখির বাসা, আর সকালবেলা কিচিরমিচির ডাক। এখন এসব দেখা যায় না।”
স্থানীয় কাঁটাহার রউফিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আব্দুল হাই মিশু বলেন, “এখন এসব যেন কেবল বইয়ের পৃষ্ঠায় পাওয়া ছড়া আর দাদুর মুখে শোনা গল্প। অতিরিক্ত কীটনাশক ও তালগাছের অভাবে বাবুই পাখি হারিয়ে যাচ্ছে।”
কালাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুজ্জামান বলেন, “বৈরী আবহাওয়া, বনজ সম্পদ নিধন, কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে বাবুই পাখির মতো বহু পাখি বিলুপ্তির পথে। এভাবে চলতে থাকলে আরও অনেক প্রজাতি হারিয়ে যাবে।”
প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তালসহ অন্যান্য বড় গাছ রোপণে উদ্যোগী হলে হয়তো আবার দেখা মিলবে বাবুই পাখির সেই ঝুলন্ত শিল্পকর্মের। এখনই প্রয়োজন দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, যাতে হারিয়ে না যায় গ্রামবাংলার প্রকৃতির এই নিপুণ কারিগর।