নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সমূর্ত জাহান মহিলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ৩১ লাখ টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভ্যন্তরীণ অডিটে অনিয়মের প্রমাণ মেলার পর কলেজের গভর্নিং বডি এ সিদ্ধান্ত নেয়।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৩১ লাখ ৫ হাজার ২২৩ টাকার আর্থিক দায় প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। বিষয়টি প্রথমে কলেজের অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে উঠে আসে। পরে নিয়ম অনুযায়ী তাকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন এবং অর্থ পরিশোধও করেননি।
এ অবস্থায় কলেজ গভর্নিং বডির ২৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ১১৪তম সভায় বিষয়টি আলোচনায় আসে। সভায় দীর্ঘ আলোচনার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯-এর উপধারা ১৭(ক)৩, ৫, ৬ ও ৭ অনুযায়ী তাকে সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ.কে.এম আনোয়ারুল ইসলামের স্বাক্ষরে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বরখাস্তের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, বরখাস্তকালীন সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কর্মপরিধি ও আর্থিক সুবিধা নির্ধারিত থাকবে। বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার পর কলেজ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই কলেজ কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপকে প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছেন।
কলেজের এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি শিক্ষার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। গভর্নিং বডির এ পদক্ষেপ কলেজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।”
শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানান, শিক্ষক সমাজ জাতির বিবেক—তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ দুঃখজনক হলেও দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।
নান্দাইল শিক্ষা পরিবারের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বরখাস্তকৃত শিক্ষক যদি আইন অনুযায়ী দায়মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন, তাহলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকতে পারে। তবে আপাতত গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তই কার্যকর রয়েছে।
শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এই ঘটনাটি দেশের বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা ও উদাহরণ—যে, অনিয়ম বা দুর্নীতি করলে তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। একই সঙ্গে এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুশাসন ও আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কলেজ কর্তৃপক্ষের অঙ্গীকারকে আরও স্পষ্ট করেছে।