শামীম শেখ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার তেনাপচা গ্রামের বাসিন্দা, ডিএমপি পরিবহন বিভাগের কনস্টেবল (বিএ-১৭৭৯৮) শাজাহান মোল্লাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ফাঁসানো চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তার বিরুদ্ধে তিনজন নারী প্রতিবেশী জোর করে জমি দখল, এসিল্যান্ড ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ অমান্য করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া, ইউএনও কর্তৃক স্থাপিত সীমানা পিলার উপড়ে ফেলা, না-দাবি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে দখলীয় জমি বৈধ করার চেষ্টা এবং জমির মালিকদের প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের অভিযোগ করেছেন।
উপরোক্ত অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে আলেয়া বেগম, শরিফা বেগম ও বর্ণা বেগম নামের ওই তিন প্রতিবেশী গত ২৮-৮-‘২৫ তারিখ পুলিশ হেড কোয়ার্টারে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে ঢাকা মহাখালি ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার বিষয়টির তদন্ত করছেন।
এদিকে অভিযোগের জবাবে কনস্টেবল শাজাহান মোল্লা কমিশনারকে ৪ পৃষ্ঠার একটি লিখিত জবাব দিয়েছেন।
যেখানে তিনি দাবি করেন তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক বলে দাবি করেন।
শাজাহান বলেন, বাদী এবং আমাদের জমি গোয়ালন্দের তেনাপঁচা মৌজার একই দাগে।
সেখানে একই দাগে ৩০ শতাংশ জমির মধ্যে আমার বাবার নামে সারে ১৫ শতাংশ জমি রয়েছে। যার দলিল ও নামজারি পত্র আমাদের কাছে রয়েছে। এর পর আরো ৩ শতাংশ জমি আমরা প্রতিবেশী খলিল মাতুব্বর গংদের কাছ থেকে ক্রয় করে ভোগ দখলে আছি।
কিন্তু বাদীরা আমাদের জমির সীমানা নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকায় তারা পরিকল্পিতভাবে আমার চাকরির ক্ষতি করার হীন উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র আমার বিরুদ্ধে ইউএনও, এসিল্যান্ড, থানা, আর্মি ক্যাম্প এবং সর্বশেষ পুলিশ হেড কোয়ার্টারে অভিযোগ দেয়। অথচ সীমানা সংলগ্ন জমিতে প্রতিবেশী জয়দার শেখ, তার মেয়ে শারমিন আক্তার, আমি নিজে, আমার ছোট ভাই শাহিন মোল্লা, খলিল মাতুব্বর, তার ভাতিজা রাফজান জনিসহ অন্যান্যদের মালিকানা রয়েছে। তাছাড়া ঢাকায় চাকরির সুবাদে আমি ঠিকমতো বাড়িতে যেতে পারি না।
শাজাহান মোল্লা বলেন, আমার বাবা একজন প্যারালাইজড রোগী। তার সুবিধার জন্য আমি বাড়িতে সীমানার কয়েক ফুট ভেতরে বারান্দা সংযুক্ত ওয়াশরুম তৈরি করার কাজ শুরু করি। কিন্তু বাদীরা তাতে আপত্তি জানিয়ে থানায় অভিযোগ দেয়। থানার এসআই আমাদের বাড়িতে গিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বললে আমরা কাজ বন্ধ রাখি।
এছাড়া গত ২৪-৯-‘২৫ তারিখ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে শুনানি শেষে ইউএনও জমি মাপার জন্য স্হানীয় অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে দেন। শুনানিতে আমার বাড়ির দক্ষিণ পাশের দুই প্লট দুরে বি,এস ৬৭ নং দাগ হতে জমি মেপে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বাদীনীদের ইচ্ছে অনুযায়ী ইউএনও ৬৫ নং দাগ হতে মেপে সীমানা পিলার দিতে বলেন। এতে আমিসহ এই দাগের আরো তিনজন মালিক আপত্তি জানাই। তখন ইউএনও স্যার আমাদেরকে এ বিষয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর আমরা রাজবাড়ীর আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। প্রকৃতপক্ষে ইউএনও স্যার সেখানে কোন সীমানা খুটি স্হাপন করেননি। তাই তার স্থাপিত খুটি তুলে ফেলার অভিযোগ অবান্তর।
তবে ইউএনও স্যারের নির্বাচিত গণ্যমান্যরা শান্তি বজায় রাখার জন্য সাময়িক একটি মাপ দিয়ে অস্হায়ী একটি খুটি স্হাপন করেন এবং চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষকে কোন ধরনের নির্মান কাজ না করতে বলে যান।
কিন্তু বাদীরা তা অমান্য করে বিতর্কিত ওই জমিতে মসজিদ নির্মানের মিথ্যা কথা বলে পাকা স্হাপনা নির্মানের চেষ্টা করে। যদিও সেখান থেকে মাত্র ১’শ গজের মধ্যে এলাকায় একটি বড় ও সুন্দর মসজিদ রয়েছে। পরে আমার পরিবারের সদস্যরা সেই নির্মান কাজে বাঁধা দেয়।
শাজাহান বলেন, মসজিদ কোন ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান নয়। এটা করতে হলে আগে মসজিদের নামে জমি ওয়াকফ করতে হয়। কিন্তু তারা তা করেননি। এলাকায় সাধারণ মুসুল্লিরাও এ বিষয়ে কিছু জানেন না।
আমার বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ পৌরসভা, ফরিদপুর শহর ও সদরপুরে জমি ও বাড়ি থাকার তারা কাল্পনিক অভিযোগ তুলেছে। এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি নিতান্তই একজন সাধারণ নিম্নবিত্ত শ্রেনীর মানুষ। আমার নামে কোথাও এ ধরনের কোন জমিজমা কিংবা বাড়ি নেই।
কনস্টেবল শাজাহান মোল্লা আক্ষেপ নিয়ে বলেন, আমরা বিগত ২৫ বছর ধরে আমার বাবার ক্রয়কৃত দলিলি সম্পত্তিতে বসবাস করে আসছি। ওই জমিতে আমি ওয়ারিশ সূত্রে ৭.৫ শতাংশের মালিক। আমার ভাইসহ অন্যান্য প্রতিবেশীরা বিতর্কিত ওই জমির সীমানায় মালিক রয়েছেন। কিন্তু বাদী পক্ষ হীন উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে শুধুমাত্র আমার বিরুদ্ধেই বিভিন্ন স্হানে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে হয়রানি করে আসছে। মা ও দুই চাচীকে ও দিয়ে অভিযোগ করিয়ে এর পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন হাফেজ মাহমুদুল হাসান। তিনি সাভার ক্যান্টনমেন্টের একটি মসজিদে ইমামতি করেন। সেই প্রভাবে মাহমুদুল এ অপকর্মগুলো করছে। তিনি পুলিশ হেড কোয়ার্টারে দায়ের করা অভিযোগের ২ নং বাদী শরিফা বেগমের ছেলে। তার বাবা সোহরাব মৃধা এবং অপর দুই চাচা সৌদি আরব প্রবাসী।
এ বিষয়ে হাফেজ মাহমুদুল হাসান মুঠোফোনে জানান, আমার বাবা ও দুই চাচা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে প্রবাসী রয়েছেন। আমার মা-চাচীদের দায়ের করা অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য। এর সপক্ষে যাবতীয় তথ্য -প্রমান তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছি। শাজাহান মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি পুলিশে চাকরি করে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ করে চলেছেন। সে জন্য অন্যদের বাদ রেখে শুধুমাত্র তার বিরুদ্ধে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তবে জমির মালিক তার তিন বাবা-চাচা প্রবাসে থাকায় মসজিদের নামে দেয়া ৩ শতাংশ জমির এখনো ওয়াকফ করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।