হাসান শাহরিয়ার পল্লব পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
গ্রামের শান্ত আর সুশৃংখল জীবনে গ্রামীণ মেলা যেন হাজির হয় অনেকটা বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের বন্যা নিয়ে।
দৈনন্দিন জীবনের গণ্ডির বাইরে মেলা যেন একটা দমকা হাওয়া। যেখানে হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। মানুষে মানুষে মিলবার জাত-পাত, ধর্মীয় পরিচয় পেছনে ফেলে এমন মিলবার জায়গা আর কোথায়? বাংলার এই মেলা ছাড়া! আর মেলা উপলক্ষে কুটুম স্বজন আসার কমতি থাকে না গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে বাড়ীতে যেন আনন্দের বন্যা, শিশু কিশোরদের হৈ হুল্লোড় মুখর হয়ে হঠে আসপাশের এলাকা।
সোমবার (২ অগ্রহায়ণ) দিনব্যাপী পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর ইউনিয়নের পদ্মপুকুর গ্রামের পাশে পদ্ম পুকুর স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত।
এই মেলাকে ঘিরে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানীরা আগের দিন এসে দোকানে মিষ্টি মিঠাই, বাঁশ, বেত, মাটির তৈরী নকশি পাতিল, মাটির ব্যাংক, পুতুল, কাঠের তৈরী ফার্নিচার, কসমেটিক, খেলনা, বাশি, বেলুন, ঘূর্নি, লোহার তৈরী হাঁসুয়া বটি, চাকু, কাগজের ফুল নানা রকম মুখরোচক খাবারেরর দোকান দিয়ে নানান জিনিসপত্রের পশরা সাজিয়ে বসেন।গ্রামীণ মানুষের মধ্য এক অন্য রকম উৎসবের আমেজে মুখোর হয়ে ওঠে আসপাশের ১০/১২ টি গ্রাম।বাড়িতে বাড়িতে শীতের পিঠা পুলি, নতুন ধান থেকে পাওয়া চালের পায়েশ, ক্ষীর, ক্ষিরসা রান্না করা হয়।
কৃষক পরিবারের প্রয়োজনিয় ধানচালা কুলা, চালুনি, ডালা ইত্যাদি ক্রয় করেন গৃহবধূ ও গৃহকর্তীরা ।এদিকে গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতেই জামাই মেয়েসহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন আসে, চলে খাওয়া দাওয়ার ধুম।
রেনুকা রানী নামের এক নারী দোকানি জানান, অনেক বছর ধরে এই পদ্মপুকুর নবান্নের মেলাতে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করে আসছি।আগে আমার বাবা দাদু ও পূর্ব পুরুষরা মাটির তৈরী হাড়ি, পাতিল, ঢাকনা, প্রদীপ দেওয়া ছোট বাটি, ধুপ জালানো ধুপতীসহ নানা রকম মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করি আমরা।
মেলার এক পাশে চলে ‘বউ মেলা’।বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের কসমেটিক দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভীড়।আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারীদের বউ মেলায় আগমন ঘটে।মেলা দেখতে আশা কিশোরী স্মৃতি রানী বলেন মেলায় এসে তার অনেক ভাল লাগছে। কসমেটিক ও ফুলের মালা কিনেছে।
কবিতা রানী বলেন,মেলায় আসার জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করি মেলায় এসে মন্দিরে ভোগ দিলাম।এছাড়াও খেলনা,শাখাঁ ও প্রসাধনী ক্রয় করেছি।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন দেড়শ বছরের বেশী সময় ধরে হয়ে আসছে এ মেলার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আপেল মাহমুদ বলেন খুব ছোট বেলা থেকে এ মেলা দেকে আসছি আসলে কবে থেকে শুরু হয়েছে তা নিশ্চিত ভাবে বলা মুশকিল।
মেলা কমিটির সভাপতি শ্রী মনজ কুমার বলেন মূলত নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা এই মেলার আয়োজন করে থাকি।তবে এ দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সংক্রান্তী উপলক্ষে কালি পুজা অর্চনা করেন এখানে।ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ছোট-বড় নানা শ্রেণী পেশার মানুষ আসেন এ মেলায়।

