নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইলের সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের শলুয়া ও শোলপুর গ্রামে শীত মৌসুমে তৈরি হওয়া বিষমুক্ত শুঁটকি মাছের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। বিল ও খালের ধারে খোলা জায়গায় মাচা তৈরি করে পলিথিনের উপর দেশের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মানসম্মত শুঁটকি। প্রতিদিন খাল, বিল ও নদী থেকে সংগ্রহ করা দেশীয় ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছ শুকিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, তিন থেকে চার মণ কাঁচা মাছ শুকিয়ে এক মণ শুঁটকি পাওয়া যায়। প্রকারভেদে এক মণ শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে আট হাজার টাকায়। এসব শুঁটকি প্রস্তুতে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না, শুধু লবণ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে শুকানো হয়।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বর্তমানে ১৫টি পরিবার শুঁটকি উৎপাদনে যুক্ত রয়েছে। চলতি মৌসুমে ৮০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাইজপাড়া ইউনিয়নের তিন থেকে চারটি স্থানে গড়ে উঠেছে শুঁটকি পল্লী, যেখানে মৌসুমজুড়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। টাকি, শোল, কই, চাঁদা, পুঁটি—বিভিন্ন দেশীয় মাছের শুঁটকি তৈরি হয় এখানে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় পুঁটি মাছের শুঁটকি।
শলুয়া গ্রামের মৎস্যজীবী অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মাচা পেতে শুঁটকি তৈরি করছি। আমাদের শুঁটকি সম্পূর্ণ রাসায়নিক-মুক্ত, মানসম্মত হওয়ায় দেশের বাইরেও চাহিদা রয়েছে।’
শোলপুর গ্রামের কানাই বিশ্বাস জানান, ‘শীত মৌসুমে খাল-বিলের পানি কমে গেলে দেশি মাছ ধরা পড়ে। সেই মাছ কম দামে কিনে আমরা শুঁটকি তৈরি করি। মৌসুমে এ ব্যবসায় ভালো লাভ হয়।’
নড়াইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শলুয়া ও শোলপুর গ্রামের মৎস্যজীবীরা যেসব শুঁটকি তৈরি করেন তা সম্পূর্ণ রাসায়নিক-মুক্ত এবং মানসম্মত। এজন্য জেলার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জেলাতেও এর চাহিদা বাড়ছে। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকি।’
বিষমুক্ত ও মানসম্মত হওয়ায় নড়াইলের শুঁটকি এখন দেশের বাজারে একটি নির্ভরযোগ্য খাদ্যপণ্যে পরিণত হয়েছে।

