রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা–২ (সদর–সোনাডাঙা) আসনের উন্নয়নে একটি সমন্বিত, আধুনিক ও জনকেন্দ্রিক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা আহবায়ক, দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী মুনীর চৌধুরী সোহেল।
তিনি এই রূপরেখাকে “লোকাল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান” হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এটি নগরবাসীর মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তাদের জীবনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত উন্নয়নের একটি বাস্তবসম্মত নকশা।
খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে জনসম্মুখে পরিকল্পনাটি তুলে ধরে সোহেল বলেন, নগরকেন্দ্রিক এই আসনে জলাবদ্ধতা ও যোগাযোগব্যবস্থা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই প্রথম ধাপে সোনাডাঙা, নিউমার্কেট, শিববাড়ী ও লেবুতলা এলাকার খাল পুনঃখনন ও ড্রেনেজ লাইন রি-ম্যাপিং করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্মার্ট ড্রেন সেন্সর স্থাপন করা এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে “রেইন ওয়াটার রিজার্ভ ট্যাঙ্ক” প্রকল্প বাস্তবায়নেরও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নে শিববাড়ী রূপসা ময়ূরী–খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংযোগ সড়ক আধুনিকায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সোনাডাঙা বাস টার্মিনালকে আন্তর্জাতিক মানের করতে নেওয়া হবে সংস্কার উদ্যোগ।
নিরাপদ চলাচলের জন্য ফুটপাত, জেব্রা ক্রসিং ও সাইকেল লেন নির্মাণের পাশাপাশি স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থায় ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) চালুর ঘোষণাও দেন তিনি।
মূল সড়কগুলোতে সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা স্থাপন ও নগরবাসীর সুবিধায় একটি ‘ফ্রি ট্রাফিক অ্যাপ’ চালুর মাধ্যমে বিকল্প রুট নির্দেশনা দেওয়ার পরিকল্পনাও তুলে ধরেন।
নদী ও পরিবেশ সুরক্ষায় ময়ূর নদ পুনরুদ্ধারকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেন মুনীর চৌধুরী সোহেল। দখলদার উচ্ছেদ, দুই পারে হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে) নির্মাণ এবং নদীকে কেন্দ্র করে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণেরও কথা জানান তিনি।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ওয়ার্ডভিত্তিক আলাদা বর্জ্য সংগ্রহ, রিসাইক্লিং সেন্টার ও কম্পোস্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা উল্লেখ করেন। শিববাড়ী থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পুরো এলাকাকে গ্রিন করিডোর হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণায় জনতার মধ্যে ইতিবাচক সাড়া দেখা যায়।
নগর নিরাপত্তায় কমিউনিটি–পুলিশ যৌথ উদ্যোগে “সেফ ওয়ার্ড” গড়ার পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, হটস্পট এলাকাগুলোতে স্মার্ট লাইটিং এবং নারীদের জন্য “নিরাপদ দিন–রাত” প্রোগ্রাম চালু করা হবে। শিক্ষা খাতে সব স্কুলে আধুনিক ল্যাব, উন্নত লাইব্রেরি এবং সরকারি সহায়তায় সোনাডাঙা ও সদর এলাকায় নতুন টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি আইটি স্কিল সেন্টার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন ও মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালুর কথাও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য উন্নয়নে খুলনা সদর হাসপাতালে নতুন ওয়ার্ড, আইসিইউ বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল রোগী ব্যবস্থাপনা চালুর প্রতিশ্রুতি দেন সোহেল। সোনাডাঙায় ২৪ ঘণ্টার মিনি–ইমার্জেন্সি সেন্টার নির্মাণ ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য মোবাইল মেডিকেল ভ্যান সেবার প্রসারও থাকবে তার পরিকল্পনায়।
যুবসমাজের কর্মসংস্থানে ‘খুলনা স্টার্টআপ হাব’ গড়ে তোলার পাশাপাশি আইটি ও প্রযুক্তিনির্ভর নানা দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিতে ওয়ার্ডভিত্তিক স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন তিনি।
তরুণ উদ্যোক্তাদের স্বল্পসুদের ঋণ, ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসে প্রশিক্ষণ এবং নারী কর্মসংস্থান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন মুনীর চৌধুরী সোহেল। মাতৃত্ব ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন এবং সোনাডাঙা–সদর এলাকায় নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা চালুর প্রতিশ্রুতিও দেন।
বস্তি এলাকায় স্যানিটেশন, পানি, বিদ্যুৎ নিশ্চিতকরণ, দুর্যোগ–সহনশীল ঘর নির্মাণে সহায়তা, আগাম দুর্যোগ সতর্কীকরণ, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র ও স্বাস্থ্য বুথ স্থাপনেরও ঘোষণা করেন তিনি। শিল্প–বাণিজ্য উন্নয়নে নিউমার্কেট ও ডাকবাংলা মার্কেট আধুনিকায়ন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল পুনরুজ্জীবন এবং সোনাডাঙায় বিশেষ ট্রেডিং জোন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতিও তুলে ধরেন সোহেল। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য লাইসেন্স, ট্যাক্স ও বাজেট প্রক্রিয়া সহজীকরণের উদ্যোগের কথাও জানান তিনি।
সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনে নতুন মুক্তমঞ্চ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মহেশ্বরপাশা–গল্লামারিতে ক্রীড়া গ্রাউন্ড উন্নয়ন এবং যুবদের জন্য আধুনিক স্পোর্টস একাডেমি প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিয়ে মুনীর চৌধুরী সোহেল বলেন, “খুলনা–২ আসনকে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে তুলব।”
ডিজিটাল সিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণের সহযোগিতা পেলে খুলনা শহরকে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সবুজ, প্রযুক্তিসমন্বিত এবং মানবিক নগর হিসেবে রূপান্তর করা সম্ভব।

