কচুয়া (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, চিকিৎসক সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে করে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার মানুষ। ফলে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পরিত্যক্ত ভবনে চলছে রোগীদের চিকিৎসা। ২০০৫ সালের ১২ই এপ্রিল চালু হওয়া ৫০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম চলে জরাজীর্ণ ভবনে। ফলে ঝুঁকিপুর্ণভাবে চলে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। হাসপাতালে কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকায় রোগীর ল্যাব টেস্ট হচ্ছে না।
দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কচুয়া উপজেলাবাসী। উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত উপজেলার একমাত্র পঞ্চাশ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল এটি।
কচুয়ার দিক লোকের বিপরীতে হাসপাতালটিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সহ প্রথম শ্রেণির ডাক্তার পদের ২৯টি পদ থাকলেও ডাক্তার আছেন মাত্র ৩ জন । অর্থাৎ ডাক্তারদের ২৯ টি পদের মধ্যে ২৬টি পদই খালি রয়েছে।
হাসপাতালের একমাত্র প্যাথলজিটি ও দীর্ঘদিন ধরে প্যাথলজিস্ট ও প্রয়োজনীয় লোক বলের অভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে সামান্য কিছু টেস্ট করার প্রয়োজন হলেই আমাদের ১৭ কি:মি: দূরে বাগেরহাটে অথবা কচুয়ার বিভিন্ন ছোট ছোট প্যাথলজিতে দৌড়াতে হয়।
প্যাথলজির মতো রুগ্ন অবস্থা এক্সরে মেশিন ব্যবস্থাপনার। হাসপাতালের মুল বিল্ডিং সহ
কোয়াটারগুলো ঝুঁকিপুর্ণ পরিত্যক্ত ও অকার্যকর থাকায় রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নানা সমস্যার কারণে বন্ধ আছে সিজার ও সব ধরনের অপারেশনের কাজ।
জেনারেটর থাকলেও প্রয়োজনীয় তৈল ও মেরামতের অভাবে বিকল হয়ে তা পড়ে আছে। বিদ্যুৎ গেলেই অন্ধকারে হাসপাতালটিতে ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সকল সমস্যার কারণে কচুয়ার লক্ষাধিক মানুষ যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানেস্থেসিয়া পদে লোক আছে, তবে তিনি কচুয়ার পরিবর্তে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করেন বাগেরহাট সদর হাসপাতালে। চিকিৎসক সংকটের কারণে এ হাসপাতালে সেবা না পেয়ে রোগীদের যেতে হয় ১৭ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাট সঢদর অথবা খুলনা মেডিক্যাল হাসপাতালে।
অপরিচিত জেলা হাসপাতালের সবকিছু না জানা থাকায় সেখানেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পায়না মফস্বলের রোগীরা। দৈনিক গড়ে প্রায় ১৫-২০ জন রোগী ভর্তি হয় হাসপাতালে। হাসপাতালে কোন কোন সময় ৪/৫দিন অবস্থান করেও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা ।
জরুরি ও বহি:বিভাগ হতে গড়ে প্রায় ২০০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন বলে হাসপাতাল সূত্র জানা যায়, হাসপাতালে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ১৬৩টি পদের মধ্যে ১০২টি পদে লোকবল থাকলেও ৬১টি পদই রয়েছে শূন্য। হাসপাতালে সরকারি ভাবে কোন নৈশ প্রহরী নেই, ওয়ার্ডবয় পদে ৪ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন, তিনিও আবার দিনের বেলা কিছু সময় থেকে বাড়ি চলে যান।
এছাড়াও কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শূন্য পদগুলো হচ্ছে- আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট- শিশু, চক্ষু, মেডিসিন, শৈল্য, অর্থো, কার্ডিওলজি, ইএনটি, চর্ম ও যৌন,প্যাথলজিস্ট, অ্যানেসথেটিস্ট, মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক)। তাছাড়া মঘিয়া ও গোয়ালমাঠ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য দুইজন মেডিকেল অফিসার, ) এবং গজালিয়া, ধোপাখালী, কচুয়া সদর, গোপালপুর, বাধাল ইউনিয়নের প্রতিটিতে একজন করে মোট সাতজন সহকারী সার্জন।
এছাড়াও কচুয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: হাসান মাহমুদ আমাদের প্রতিনিধিকে জানান,আমাদের হাসপাতালের মূল বিল্ডিংটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করায়, আমরা অতিরিক্ত বিল্ডিং এর বারান্দায় ও বায়রে রোগীদের রেখে চিকিৎসা দিচ্ছি।এছাড়া আমি সহ আমরা মাত্র তিনজন ডাক্তার হাসপাতালটিকে চালাচ্ছি।
আমি বহুবার চিঠি লিখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সমাধান পাইনি। বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. আ.স. মো: মাহবুবুল আলম আমাদের প্রতিনিধিকে জানান , চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে কয়েকবার আলোচনা করেছি ও চিঠি লিখেছি, কিন্তু কোন সমাধান পায়নি।তবে নতুন ডাক্তার নিয়োগ হলে সমস্যার সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে।

