যশোর প্রতিনিধি
উদ্বোধনের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি যশোর জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ)। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রস্তুত বেড থাকা সত্ত্বেও লিফট সংকট, জনবল ঘাটতি ও আনুষঙ্গিক জটিলতার কারণে গুরুতর অসুস্থ রোগীরা জীবন রক্ষাকারী এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে রোগীদের ঢাকাসহ অন্য জেলায় কিংবা বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে কয়েকগুণ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, লিফট সুবিধা না থাকা, প্রয়োজনীয় জনবল সংকট এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের বরাদ্দ না থাকাসহ নানা সমস্যার কারণে আইসিইউ চালু করা যাচ্ছে না। এসব কারণে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কোভিড-১৯ মহামারির সময় ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যান্ডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি)’ প্রকল্পের আওতায় দেশের ২২টি জেলায় ২৪০ শয্যার আইসিইউ স্থাপন করা হয়। এর অংশ হিসেবে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ এবং ২০ শয্যার এইচডিইউ নির্মাণ করা হয়। ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর ভার্চুয়ালি নতুন আইসিইউ ও আইসোলেশন ইউনিট উদ্বোধন করা হয়।
করোনারি কেয়ার ইউনিট ভবনের চতুর্থ তলায় স্থাপিত আইসিইউ ও আইসোলেশন ইউনিটে রয়েছে আধুনিক ভেন্টিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, অটোমেটিক সিরিঞ্জ পাম্প, ডিফিব্রিলেটর, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, বিপেপ-সিপেপসহ প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা সরঞ্জাম। প্রতিটি বেডের বিপরীতে রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, এয়ার ও ভ্যাকিউম লাইন। চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য আলাদা কক্ষও প্রস্তুত করা হয়েছে।
সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র লিফট সমস্যার কারণে আইসিইউ চালু করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের তথ্য কর্মকর্তা ডা. বজলুর রশিদ টুলু বলেন, “নতুন আইসিইউ ও আইসোলেশন ইউনিট চালু হলে অল্প খরচে রোগীরা উন্নত সরকারি চিকিৎসা সেবা পাবেন।”
এ বিষয়ে যশোর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, “বর্তমান ভবনের লিফট সুইজারল্যান্ডের শিল্ড লিফট। সরকারি ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী, একই কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউ সম্প্রসারণ কাজ করলে রক্ষণাবেক্ষণ পাওয়া যাবে না। তাই আমাদের বিকল্প ভেন্ডরে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
তিনি জানান, তিনতলা পর্যন্ত লিফট নির্মাণে যেখানে ব্যয় হয়েছে ৮০ লাখ টাকা, সেখানে মাত্র এক তলা সম্প্রসারণের জন্য ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এই অস্বাভাবিক বরাদ্দের কারণেই প্রকল্পটি আটকে রয়েছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, “তৃতীয় তলা পর্যন্ত লিফট থাকলেও চতুর্থ তলায় আইসিইউ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাবের কারণে প্রক্রিয়া থমকে গেছে।”
ফলে চার বছর আগে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি আইসিইউটি এখনো সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসছে না। শুধুমাত্র লিফট সম্প্রসারণের জটিলতায় যশোরবাসী উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে।

