মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা বসির লস্করের স্ত্রীর নামে কোটি টাকার সরকারি ভিপি সম্পওি লিজ ও বসির লস্করের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
তিনি নিজ দায়িত্বে থাকাকালীন নিয়ম বহির্ভূতভাবে তার স্ত্রীর নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি ভিপি (Vested Property) সম্পত্তি লিজ গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি একই কর্মকর্তা দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে একই স্টেশনে বহাল থেকে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
ভূমি অফিস ও স্থানীয়দের তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে সিরাজদিখান উপজেলার হাজী গাঁও মৌজায় অবস্থিত সুখের ঠিকানা হাউজিং কোম্পানির ভেতরে প্রায় ৫০ শতাংশ সরকারি ভিপি সম্পত্তি লিজ দেওয়া হয়। ভিপি কেস নং ৭৬০/৭৯ অনুযায়ী উক্ত জমির আরএস খতিয়ান নং ৩৪৬ (এসএ ৩৩৬), দাগ নং ৬৯৯ (আরএস ৭৪৯)।
অভিযোগ অনুযায়ী, এই জমিটি উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ লস্করের স্ত্রী হালিমা আক্তার পপি ছাড়াও তাইজু্দ্দিন ও শরিফ হোসেনের নামে লিজ দেখানো হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দায়িত্বে থাকা কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা তার নিকটাত্মীয়ের নামে সরকারি সম্পত্তি লিজ নেওয়া সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি স্বার্থের সংঘাতের (Conflict of Interest) জ্বলন্ত উদাহরণ। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রেখে এই লিজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে দাবি সচেতন মহলের।
এলাকাবাসীরা বলেন, যে কর্মকর্তা লিজ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত, তার পরিবারের নামে সরকারি জমি লিজ হলে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পাবে কীভাবে?
এদিকে একই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরও বিস্তর অভিযোগ সামনে এসেছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী সাধারণত একজন কর্মকর্তা এক স্টেশনে তিন বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। অথচ মোহাম্মদ বশির আহমেদ লস্কর দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সিরাজদিখান উপজেলায় বহাল রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, একাধিকবার তাকে বদলির আদেশ দেওয়া হলেও ‘অদৃশ্য শক্তি’ ও প্রভাবশালী মহলের লবিংয়ের মাধ্যমে প্রতিবারই তা স্থগিত করানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন একই স্থানে থাকার সুবাদে তিনি অফিসকে কার্যত নিজের ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। স্থানীয় দালাল চক্রের মাধ্যমে কাজ করলে দ্রুত সেবা মিললেও সরাসরি গেলে সাধারণ মানুষ চরম হয়রানির শিকার হন।
অফিসের এক কর্মচারী জানান, বদলির আদেশের খবর শুনে আমরা স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু বদলির ৮/১০দিনের মাথায় পদন্নোতি নিয়ে আবারো সিরাজদিখানে চলে আসেন তিনি। এরপর থেকে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ লস্কর কে ফোন দিলে পরে কথা আছে বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুম্পা ঘোষ বলেন, আমিও বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে। জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানাবো। পরবর্তী তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

