গিয়াস উদ্দিন মিয়া, গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর নির্ধারিত থাকলেও বয়স সংক্রান্ত তথ্য বিকৃতি, রাষ্ট্রীয় নথি জালিয়াতি এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ৩৭ বছর বয়সে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশালের গৌরনদীর এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
আওয়ামীলীগ শাসনামলে বিষয়টি দীর্ঘদিন ধামাচাপা থাকলেও সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. জুলহাস মৃধা। তিনি বর্তমানে গৌরনদী উপজেলা ভূমি অফিসে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মী এবং পূর্ব শরিফাবাদ গ্রামের আব্দুর রব মৃধার ছেলে।
নথিপত্র পর্যালচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পান জুলহাস মৃধা। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকালীন সময়ে ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ছিল ৫ জুন ১৯৭৫ ইং।
সে হিসেবে ওই সময় তার বয়স দাঁড়ায় ৩৭ বছর যা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের নির্ধারিত বয়সসীমার চেয়ে ৭ বছর বেশি।
অভিযোগ রয়েছে, চাকরিতে যোগদানের পর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে যথাযথ ও বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ ছাড়াই তিনি জন্মনিবন্ধনের অনলাইন রেজিস্টার এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১ জানুয়ারি ১৯৮৩ ইং হিসেবে সংশোধন করান।
তবে অনুসন্ধানে পাওয়া নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১২ সালের ভোটার তালিকা, মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের জন্মনিবন্ধনের মূল বালাম বই এবং পুরোনো জাতীয় পরিচয়পত্রে এখনো জুলহাস মৃধার জন্ম তারিখ ৫ জুন ১৯৭৫ ইং হিসেবেই বহাল রয়েছে।
অনুসন্ধানের চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সার্ভারভিত্তিক মূল ডেটাবেজের ভোটার নিবন্ধনের অনলাইন সার্ভার কপির পিন নম্বরে এখনো জুলহাস মৃধার জন্মসাল ১৯৭৫ ইং হিসেবেই সংরক্ষিত রয়েছে।
অর্থাৎ, অনলাইনে তথ্য পরিবর্তন করা হলেও সরকারি মূল নথি ও নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে জুলহাসের প্রকৃত বয়স এখনো অক্ষুণ্ন ও অপরিবর্তিত রয়েছে।
এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জুলহাস মৃধার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না। তিনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সনদ অর্জন করেছেন সে সম্পর্কেও স্থানীয়দের কাছে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
স্থানীয়রা আরও জানান, বয়সের অযোগ্যতা সত্ত্বেও তৎকালীন এক প্রভাবশালী সংসদ সদস্য আত্মীয়ের সুপারিশে এবং দলীয় পরিচয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে জুলহাস মৃধা বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চাকরিতে প্রবেশ করেন। এলাকাবাসীর ধারণা, বয়স সংক্রান্ত তথ্য গোপন ও বিকৃত করে এবং রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করেই সরকারি চাকরি বাগিয়ে নেন জুলহাস মৃধা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত অফিস সহায়ক জুলহাস মৃধা। তিনি দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সঠিক নয়।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সুমন বলেন, বিষয়টি আমার দায়িত্ব গ্রহণের অনেক আগের। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

