নবধারা প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গোপালপুর গ্রামের সুকান্ত অধিকারী। তার পিতা সুভাষ অধিকারী একজন কৃষক। পদার্থবিজ্ঞানে কৃতিত্বের সঙ্গে মাস্টার্স পাস করে ঘরে বেকার বসে আছেন করোনা সংক্রমণ এর আগেই। কৃষক বাবার কাছে হাত পেতে ১০/২০ টাকা নিতে হয়। বাবা জমিতে গাধার মত খাটছেন এটাও সহ্য হচ্ছিলোনা সুকান্তর। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় সুকান্ত তাই একদিন ভোরে বাবার সাথে কাস্তে নিয়ে জমিতে কাজ করা শুরু করলো সেটাও তিন বছর হয়ে গিয়েছে। এখন সে আর দশজন কৃষকের মতোই ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে কাজ করে। প্রচন্ড শীত আর সূর্যের খরতাপ তাকে প্রতিদিন পুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। অথচ তিনি করতে পারতেন বড় কোনো চাকরি। তার মাথার উপরে থাকতে পারতো ফ্যান অথবা এসি রুমে বসে তিনি কাজ করতে পারতেন কথাগুলো এক নিশ্বাসে বললেন তার এক সময়ের ছাত্র রিকো কবিরাজ।
রিকো তার কাছে প্রাইভেট পড়তেন। রিকো বললেন, সুকান্ত দা পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। সে গোপালপুর পঞ্চপল্লী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিলেন। কালকিনির শশিকর মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসিতে এ প্লাস পান তিনি। গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন। সুকান্ত দা আমার এলাকার সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। কিন্তু তিনি কোন চাকরি পেলেন না। তাই এখন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জমিতে কঠোর পরিশ্রম করছেন।
সুকান্ত অধিকারী বলেন, অনেক চেষ্টা করেছি চাকরি-বাকরির জন্য কিন্তু ভাগ্য সহায় হচ্ছিল না। এরমধ্যে করোনা এসে আঘাত হানায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে শুরু করি। বাবার কাছ থেকে হাত পেতে ১০/২০ টাকা হাত খরচ নিয়ে চলতে অপমান বোধ হচ্ছিল। তাই একদিন সকালে বাবার সাথে জমিতে কাজ করা শুরু করি। একটা চাকরি পেলে বেচেঁ যেতাম। কিন্তু কে দেবে চাকরি ?
গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লাল বাহাদুর বলেন, সুকান্ত অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। তার কাছে যারা প্রাইভেট পড়েছে তারা অনেকে ভালো ভালো চাকরি পেয়েছে। তবে তার অবস্থা কেন এমন হলো সেটা আমি বলতে পারবো না।
সুকান্ত অধিকারীর শিক্ষক গোপালপুর পঞ্চপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস চন্দ্র বাড়ই নবধারা কে বলেন, সুকান্ত আমার অত্যন্ত প্রিয় ছাত্র ছিল। সুকান্ত একটা মেধার টুকরো। সে যে কেন এভাবে পড়ে আছে সেটি আমার বোধগম্য নয় তার জন্য আমার ভীষণ কষ্ট হয়। তবে সুকান্ত গোপালপুর গ্রামের অজ পাড়াগাঁয়ে পড়ে থাকার কারণে এমনটি হতে পারে। তার একটা চাকরি হোক আমি সে প্রার্থনাই করি।
টুঙ্গিপাড়ার গোপালপুর গ্রামের মেধাবী সুকান্ত অধিকারী একটি চাকুরী পেয়ে যেমন তার পরিবারের অভাব মেটাবেন তেমনি করে তার মেধা এ দেশের কাজে ও ব্যবহার হবে এমনটাই আশা করেন তার পরিচিত জনেরা।একজন সুকান্তর চাকুরী হবে কি ? তার মেধার মূল্যায়ন করবে কি এ দেশ ? এ প্রশ্নের উত্তর সময়ের হাতেই আপাতত তোলা রইলো।