আরবিনা শিকদার,বিশেষ প্রতিবেদক
খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা থানার অধীনে ছোট বয়রা নামক এলাকায় ৫ শতক জমির উপরে, ১৯৭৮ সালে গড়ে উঠেছে “ছোট বয়রা মনিন্দ্র রায় স্কুল।স্কুলের পাশেই কোল ঘেঁষে অবস্থিত কালী মন্দির।
১৯৯২ সালে এই ছোট বয়রা মনিন্দ্র রায় স্কুলে চাকরির শর্তে,ওই এলাকারই মেয়ে কৃষ্ণা মজুমদারের পিতা আরো পাঁচ শতক জমি স্কুলের নামে দানপত্র করে দেন।
জানা যায়,ছোট বয়রা মনিন্দ্র রায় স্কুল ১৯৯০ সালে রেজিষ্ট্রেশন ভুক্ত হয়।পরবর্তীতে ২০১৩ তে জাতীয়করণ করা হয় “ছোট বয়রা মনিন্দ্র রায় স্কুল”। ছোট বয়রা মনিন্দ্র রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় । ছোট বয়রা শ্মশানঘাট সার্বজনীন পূজা মন্দির ও স্কুলের একটি মাত্র প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলেই প্রথমেই মন্দির, বাম হাতে স্কুল। অভিযোগ রয়েছে, স্কুলের জন্য দানকৃত ১০ শতক জমি বয়রা শ্মশান ঘাট সার্বজনীন পূজা মন্দির দখলে নিয়েছে।
এ বিষয়ে সরে জমিনে অনুসন্ধান করতে গেলে জানা যায়, এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য, মন্দিরের সামনের সীমানা দিয়ে রাস্তা হওয়ার কথা ছিল। এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা নিজেদের ভিতরে আলোচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, রাস্তাটা ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। সেভাবেই বর্তমান রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এর কারনে স্কুলের পাঁচ শতক জমির বেশ কিছু অংশ রাস্তার ভিতর চলে যায়। মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের মৌখিক চুক্তি হয় যে, সরকারি খাস জমি স্কুলকে প্রদান করা হবে। সেই প্রেক্ষিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং মন্দির কর্তৃপক্ষের ভিতরে মৌখিক চুক্তিনামা হয়। পরবর্তীতে মন্দির কর্তৃপক্ষ মৌখিক চুক্তি ভঙ্গ করে। তাদের মন্দিরের জায়গাটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এ বিষয় নিয়ে এলাকাবাসী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হন। বিষয়টা সুরাহা করার চেষ্টা করেন কিন্তু তার কোন সমাধান হয়নি। বর্তমানে স্কুলের পরিধি কমেছে বেড়েছে মন্দিরের টিনের (ছাউনি) চাল। কাছ থেকে খেয়াল না করলেই স্কুলটাকে দেখাই যায় না। এবং স্কুলে নিজস্ব কোন প্রবেশদ্বার নাই। অ্যাসেম্বলি বা ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলা করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা বা স্হান নাই। যেটুকু আছে সেখানেও বন জঙ্গলে ভরা মন্দির কর্তৃপক্ষ সেই স্থানটা পরিষ্কার করতেও বাধা দান করেন।
এই বিষয়ে ছোট বয়রা মনিন্দ্র রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা, কৃষ্ণা মজুমদার বিষয়টা আমাদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি জানান, অফিসিয়ালি তিনি ডিসি বরাবর লিখিত চিঠি প্রদান করেছেন। বাদ যায়নি জেলা শিক্ষা অফিস, থানা শিক্ষা অফিস, খুলনা ১৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও।তিনি এই বিষয়ের একটি সুষ্ঠু তদন্ত ও একটি সুষ্ঠু পদক্ষেপ আশা করছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করেন নাই।
এ বিষয়ে স্কুলের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম কবিরুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়টা নিয়ে বহুদিন ধরেই চেষ্টা চলছে সুষ্ঠু সমাধানের এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছেও গিয়েছিলাম কিন্তু তারাও কোন সঠিক ফয়সালা দিতে পারেননি। প্রাক্তন ছাত্র রাজ বলেন, আমি নিজেও এই স্কুলের ছাত্র ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি এই মন্দিরটা ছিল অল্প একটু জায়গার ভিতরে। আমরা হিন্দু মুসলমান সবাই মিলে এই মন্দির কে রাত জেগে পাহারাও দিয়েছি। স্কুলে বাচ্চাদের অ্যাসেম্বেলি করার জায়গাটুকুও নাই। খেলাধুলা করতে পারেনা এবং একটা শহীদ মিনার নাই। আরো আশ্চর্যের বিষয় শিক্ষার্থীরা এক সময় কলা গাছ কর্তন করে শহীদ মিনার তৈরি করত এবং এই ছোট গাছ কাটা কে কেন্দ্র করে মন্দির কর্তৃপক্ষ থানা পুলিশও করে। শেখ রাজের ভাষ্য মতে পাখির লেজের মত একটু একটু করে মন্দিরের চাল (ছাউনি)বেড়ে যাচ্ছে। তারা চায় স্কুল এবং মন্দির পাশাপাশি দ্বন্দ্ব সংঘাত ত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করুক। স্কুলের একটা নিজস্ব প্রবেশদ্বার থাকুক। “আমরা চাই সহ অবস্থান। খেলাধুলার মাঠ না থাকায় ওই এলাকার ইয়ং ছেলেরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। কোমলমতি শিশুরা মোবাইল আসক্ত হচ্ছে। স্কুল মাঠে খেলার কোন সুযোগ নাই। মন্দির কর্তৃপক্ষ খেলাধুলায় বাধা প্রদান করে। তাদের উপাসনা বাধাগ্রস্ত হয়।
স্কুলের বর্তমান সভাপতি, এন এ ওহাব বুলবুল বলেন, “আমরা স্কুলের এই জমি নিয়ে অফিসিয়ালি ডিসি অফিস কে জানিয়েছি। আশা করছি স্কুলের প্রতি সুদৃষ্টি প্রদান করবেন। আমরা চাই মন্দির মন্দিরের মতো থাকুক, স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরিবেশ বান্ধব হোক।, স্কুলে ৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। বর্তমানে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ১৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক সকলের একই কথা একই দাবি। স্কুলের খেলার মাঠটা যেন প্রসারিত হয়। অ্যাসেম্বলি করার উপযুক্ত হয়।শরীর চর্চা ও খেলাধুলার উপযুক্ত হয়। স্কুলের সামনের অংশ ইট পাথরে জঙ্গলময়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। শিশুরা তাদের নিজস্ব একটা শহীদ মিনার চায়।স্কুল তার স্বরূপে সগৌরবে কোমলমতি শিশুদের মানসিক, শারীরিক বিকাশে তার দ্যুতি ছড়াক। মন আর মননে বিকশিত হোক। স্কুল হয়ে উঠুক আলোকদ্যুতিময়। মন্দির থাকুক উপাসনার অংশ হয়ে। এলাকাবাসীদের ক্ষোভ আক্ষেপ হতাশা এগুলোকে দূর করে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কে পাশাপাশি বেঁচে থাকুক দুটি প্রতিষ্ঠান এটাই কাম্য।