জাবি প্রতিনিধি
সাইফুল ইসলাম সভাপতি, সেক্রেটারি ও প্রচার সম্পাদকের আত্মপ্রকাশের পর এইবার সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো ইসলামি ছাত্র শিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা। রোববার (৩ নভেম্বর) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) কনফারেন্স রুমে ৪১ দফা প্রস্তাবনা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তারা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন সদ্য সমাপ্ত জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সংঘটিত জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদ, পঙ্গুত্ববরণকারী ও আহত ছাত্র-জনতাকে।
সংবাদ সম্মেলনে শিবির সভাপতি বলেন, জুলাই বিপ্লবের রক্তস্নাত পটভূমিতে সহস্রাধিক শহীদের কোরবানি এবং মহামূল্যবান আত্মত্যাগ এবং ৫ই আগষ্টের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত হাজির করেছে, যা নিপীড়িত জনতার একক কণ্ঠস্বরকে প্রাধান্য দিয়ে দীর্ঘদিনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়েছে।এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বাংলাদেশকে একটি নতুন দিগন্তে পুনর্গঠিত হবার সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে।
শিবির নেতারা আরও বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দলদাস ও পরাধীন মানসিকতাসম্পন্ন চিন্তাহীন প্রজন্ম তৈরির কারখানার আদলে গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়াই উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কৌশলে লুটপাট চালিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসকে করা হয়েছে কংক্রিটের নগর। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের ফ্যাসিবাদী আদলে চলতে চলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদার গণতান্ত্রিক চর্চা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা ভয়াবহভাবে ব্যাহত হয়েছে।
ক্যাম্পাসে নতুন ভাবে আশার দিক উন্মোচন হবে বলে নেতারা উল্লেখ করে বলেন, ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটনের পরবর্তী নতুন সময়ে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এই ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে নতুনভাবে পুনর্গঠিত হয়ে অবারিত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অ্যাকাডেমিক কাঠামো ও সামগ্রিক পরিচালনা ব্যবস্থায় সংস্কার আনা অত্যন্ত জরুরি এবং এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন। আমরা বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আজ এমন একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি, যা অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষ, সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং শিক্ষার্থী কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সংকটগুলোকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের মাধ্যমেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি রোল মডেল হতে পারে, যেখানে শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক এবং ব্যক্তিগতভাবে বিকশিত হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ ও পর্যাপ্ত সুযোগ পাবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাত এগারোটায় প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সাকি স্বাক্ষরিত ‘”জাকসু সচলসহ ক্যাম্পাসে সুস্থ ধারার অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি চায় ছাত্রশিবির’” এই শিরোনামে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো শিবির সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি ও সেক্রেটারি মহিবুর রহমান মুহিবের যৌথ বিবৃতির বার্তা গণমাধ্যমে প্রেরণের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি।