আমিনুল ইসলাম, দুর্গাপুর (রাজশাহী)
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পানের জন্য দেশজুড়ে পরিচিত। এই অঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পানচাষের ওপর নির্ভরশীল। তবে সম্প্রতি পানের বাজারে হঠাৎ ধস নামায় চরম সংকটে পড়েছেন এ উপজেলার পানচাষীরা।
চাষিরা জানান, বছরের শুরুতে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও বর্ষায় অতিবৃষ্টি ও রোগবালাই মোকাবিলা করে ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম নেই। আগে যে মোটা ও বড় আকৃতির পান প্রতি বিড়ি ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৩০-৩৫ টাকায় নেমে এসেছে। মাঝারি ও চিকন পানের দাম পড়েছে ৩-৫ টাকা—যেখানে আগে তা ছিল ১০-২০ টাকা পর্যন্ত।
উপজেলার নান্দিগ্রামের পানচাষি আলাউদ্দিন মোল্লা জানান, “১৫ বছরের পুরনো দেড় বিঘার বরজই ছিল সংসারের প্রধান ভরসা। প্রতিবছর এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় হতো। এখন লোকসান গুণতে হচ্ছে।”
শ্যামপুর গ্রামের এক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বর্ষার শুরুতেই ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি সুদে। এখন পান বিক্রি করছি কম দামে, কারণ কিস্তি দিতে হবে। এনজিও আর ঋণের কিস্তির টাকা দিয়ে কিছুই হাতে থাকছে না।”
দুর্গাপুর উপজেলার দুর্গাপুর বাজার, শ্যামপুর, আলীপুর, গোপালপুর, নারায়নপুর, দাওকান্দি, কালীগঞ্জ ও পানানগর আড়তে সপ্তাহে ছয় দিন পানের কেনাবেচা হয়। এসব আড়তে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটি টাকার পানের লেনদেন হলেও বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপুরে বর্তমানে ২,১৪০ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বর্ষাকালে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় পানের দাম পড়ে যায়, তবে শীতকালে দাম বাড়ে বলে চাষিরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন।
উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান বলেন, “পান দীর্ঘমেয়াদি ফসল হওয়ায় এর দামে ওঠানামা হয়। বর্ষাকালে উৎপাদন বাড়ে, ফলে বাজারে সরবরাহ বেশি হয় আর দাম পড়ে যায়। তবে পানচাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
তবে চাষিদের আশঙ্কা, বাজারে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাব থাকতে পারে। তাঁদের প্রশ্ন, যখন প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ছে, তখন শুধু পানের দাম কেন কমছে? পানচাষের সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলো বর্তমানে ঋণের বোঝা আর দুশ্চিন্তায় জর্জরিত।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.