‘জুলাই কেন মানি মেকিং মেশিন হবে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটাই হয়েছে’ এমন মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। রোববার (২৭ জুলাই) দিবাগত মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
লাইভে কান্নাজড়িত কণ্ঠে উমামা বলেন, ‘অন্যের ক্ষতি করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। কাউকে অসম্মান বা কষ্ট দেওয়ার মনোভাবও নেই।’ ছাত্র ফেডারেশনের সময়কার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘৩০–৪০ জন নিয়ে মিছিল করেছি, তখন বলতাম ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। কিন্তু কখনো ভাবিনি এই স্লোগান দিতে দিতে শিশুসহ মানুষ রাস্তায় জীবন দেবে। জুলাই–আগস্টে সাধারণ মানুষের সঙ্গে লড়েছি, সেই স্বপ্নেই এক বছর বেঁচে ছিলাম।’
উমামা জানান, ৫ আগস্টের পর আন্দোলনের কেন্দ্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। ‘দেশের জন্য কিছু করার বড় স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ শুরু করি। তখন বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম থেকেও আলাদা হয়ে যাই। আমাকে কেউ ডাকতো না, হয়তো কারণ আমি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেকেই সমন্বয়কের পরিচয়ে জায়গা দখল শুরু করে। কেউ কেউ চাঁদাবাজি ও দখলবাজিতে জড়িয়ে পড়ে। মনে হচ্ছে যেন সমন্বয়ক বাহিনী তৈরি হচ্ছে আওয়ামী লীগের রক্ষীবাহিনীর মতো।’
তিনি বলেন, ‘এখন প্রশ্ন উঠছে বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম আদৌ প্রয়োজন আছে কি না। এটা শুধু ছাত্রদের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার। গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছে এই আন্দোলন থেকে, সেটাকে আরও ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।’ আক্ষেপ করে উমামা বলেন, ‘জুলাই আন্দোলন যে মানি মেকিং মেশিন হয়ে গেছে, তা আমি মুখপাত্র হওয়ার পরই আবিষ্কার করি। টেন্ডার, তদবির, ডিসি নিয়োগ সবই হয়েছে এই আন্দোলনের ব্যানারে। এতদিন এটা নিয়ে কোনো ধারণা ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে, আমি হাজার কোটি টাকা কামিয়েছি। অথচ আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমার ভালো পরিবার, স্কলারশিপ দরকার হয় না, পরিবারের সাপোর্টে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা আছে।’
ছাত্র ফেডারেশন ছাড়ার পর তার সঙ্গে অনেকের আচরণ কষ্টদায়ক ছিল জানিয়ে বলেন, ‘তারা আমার মেসেজ দেখতো না। ছাত্রশক্তি কোরামের লোকজনের আচরণে মনে হতো, আমি বানের জলে ভেসে এসেছি। অথচ জুলাই আন্দোলনে আমার অবদান তখনই বেশি করে চোখে পড়তে থাকে।’
উমামা ফাতেমার বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীরভাবে ভাবছেন। আর এ ভাবনাতেই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আদর্শ কি বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে?
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.