গত বছরের সাউথপোর্ট দাঙ্গার এক বছর পর যুক্তরাজ্যে এই গ্রীষ্মে আবারও বর্ণবাদ ইস্যুতে অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পূর্ব লন্ডনের এপিং শহরে একটি হোটেলে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা নিয়েও দেখা দিয়েছে উত্তেজনা।
এপিং শহরে সম্প্রতি শুরু হওয়া বিক্ষোভ থেকে এরই মধ্যে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে এবং ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত সপ্তাহে এক বিক্ষোভে আট জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের পুলিশ ফেডারেশনের চেয়ারপারসন টিফ লিঞ্চ বলেন, “এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। পরিস্থিতি কত দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে এবং আমাদের প্রস্তুতির কতটা ঘাটতি আছে, সেটারই ইঙ্গিত এটি।”
বিক্ষোভকারীরা ‘আমাদের সন্তানদের রক্ষা করো’ এবং ‘তাদের দেশে ফেরত পাঠাও’ স্লোগান দেয়। কিছু ব্যানারে লেখা ছিল ‘বিদেশি অপরাধীদের বিতাড়িত করো’৷
ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য জোনাথন রেনল্ডস গত বৃহস্পতিবার স্কাই নিউজকে বলেন, “সরকার, পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে”। তিনি আরও জানান, “আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হোটেলের সংখ্যা ৪০০ থেকে কমে এখন ২০০টিতে নেমে এসেছে।”
এদিকে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার অনিয়মিত অভিবাসী ছোট নৌকায় করে চ্যানেল পার হয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে, যা এই সময় পর্যন্ত বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যা। এই ইস্যু নিয়ে দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডানপন্থি গোষ্ঠীর উসকানিতে আরও বেড়েছে।
ঠিক এক বছর আগে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই সাউথপোর্টে তিন কিশোরী ছুরি হামলায় নিহত হওয়ার পর গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে হামলাকারী একজন অভিবাসী। যদিও পুলিশ নিশ্চিত করে, সে যুক্তরাজ্যেই জন্মগ্রহণকারী একজন তরুণ।
এপিংয়ে চলমান উত্তেজনা শুরু হয় এক ৩৮ বছর বয়সী আশ্রয়প্রার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর। এরপর থেকেই ডানপন্থিদের নেতৃত্বে সেখানে বিক্ষোভ জোরালো হয়ে ওঠে। যদিও স্থানীয় এমপি নিল হাডসন পার্লামেন্টে বলেন, “এই সহিংসতা এপিংয়ের চেহারা নয়, এটি আমাদের সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না।”
বিক্ষোভকারীদের অনেকেই আসলে বাইরের এলাকা থেকে এসেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতেও বিক্ষোভকারীরা ফের জড়ো হয় এবং একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় কাউন্সিল রোববারের সম্ভাব্য আরেকটি বিক্ষোভের আগে হোটেলটিতে আর আশ্রয়প্রার্থী না রাখার বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে গ্রীষ্মে আরও বর্ণবাদী দাঙ্গার সম্ভাবনা রয়েছে। একই রকম বিক্ষোভ ইতোমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের ডিস শহর এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের ব্যালিমেনাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এসব সংঘবদ্ধ বিক্ষোভের অন্যতম চালক। রিফর্ম ইউকে পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ বলেন, “এটা শুধুই রাজনৈতিক ইস্যু নয়। জনগণ হতাশ। সরকার বুঝতে পারছে না আমরা কতটা ক্ষুব্ধ। এপিংয়ের হোটেলের বাইরে যারা ছিলেন তাদের সবাই চরম ডানপন্থি নয়। অনেকে ছিলেন সাধারণ পরিবার।”
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রচারণার প্রভাবে উত্তেজনা বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রভাবকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। বরং স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই এখন জরুরি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.