যশোর প্রতিনিধি
দাফনের একদিন পার হয়ে গেলেও আদরের সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা-মা। বাকরুদ্ধ বাবা। আর মা দিশেহারা। বাধ মানছে না অশ্রু। কিছুতেই থামছেনা ফারিহার মায়ের আহাজারি। খানিকটা দূরে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে চুপচাপ বসে আছেন বাবা মাহাবুর রহমান।
এখনো শোকাচ্ছন্ন হয়ে আছে যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রাম। সবাই শান্ত্বনা দিচ্ছেন মেয়ে হারা মা-বাবাকে। কিন্তু কিছুতেই বুকের মানিককে হারানোর শোক ভুলতে পারছেন না তারা।
বাস দুর্ঘটনায় নিহত খাজুরা মনিন্দ্রনাথ মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিহা সুলতানার (১৩) কোদালিয়া গ্রামে মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে এ শোকাবহ পরিস্থিতি চোখে পড়ে। পাঁচ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বেলা ১০টায় মৃত্যু হয় তার।
গত ২৩ জুলাই যশোর সদর উপজেলার কোদালিয়া বাজারে যশোর-মাগুরা সড়কে বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার জন্য একটি যাত্রীবাহী বাসে উঠতে গেলে তাড়াহুড়ো করে চালক বাস ছেড়ে দিলে বাসের চাকায় পিষ্ট হয় ফারিয়া। এ ঘটনায় ঘাতক বাস চালক কিংবা কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
ফারিহার স্বজন ও পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিদিনের মতো স্কুলে যাওয়ার জন্য সড়কের পাশে বাসস্টপেজে দাঁড়িয়ে ছিল ফারিয়া। যশোর থেকে ছেড়ে আসা মাগুরাগামী যাত্রীবাহী লোকাল বাস সকাল ৯টার পরপরই কোদালিয়া বাজারে এসে থামে। এ সময় ফারিহা বাসে উঠতে গেলে তাড়াহুড়ো করে চালক বাস ছেড়ে দিলে তার কোমরের ওপর দিয়ে বাসের পেছনের চাকা উঠে যায়। এতে ফারিহা গুরুতর জখম হয়। তখন তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুপুর ১২টার দিকে আহত ওই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাসটি ভাঙচুর করে এবং যশোর-মাগুরা মহাসড়ক অবরোধ করে খাজুরা বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
ফারিহার স্বজনেরা জানান, ফারিহা চার ভাই বোনের মধ্যে মেজ। ফারিহার বাবা হতদরিদ্র কৃষক। পরের জমিতে কৃষি কাজ করেই সংসার চালান। সড়ক দুর্ঘটনায় ফারিহার কোমরের অংশ থেকে পা পর্যন্ত পিষ্ট হয়ে যায়। হতদরিদ্র পরিবারের হঠাৎ করে এই দুর্ঘটনায় পাগলপ্রায় বাবা মাহবুবুর রহমান।
ফারিহার চাচা গোলাম রসূল মুঠোফোনে বলেন, ‘ফারিহাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। দুর্ঘটনায় ফারিহার কোমর, দুই পা পর্যন্ত এমনভাবে পিষ্ট হয়েছে, কোনটি কি সেটা বুঝার উপায় নেই। পাঁচদিন ধরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা চলছিলো। তার ডান পা পচঁন ধরেছিলো। সোমবার দুপুরে তার অস্ত্রপচার হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তার আগেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ফারিহার বাবা হতদরিত্র। কিন্তু তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখতো। সব সন্তানকেই পড়াশোনা করিয়েছেন। ফারিহাকে খুব আদর করতো। দুঘটনায় এভাবে সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় তার মা বাবা। এভাবে যেন কারও সন্তান অকালে ঝরে না পড়ে; এই জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান ফারিহার চাচা। সোমবার রাতেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’
খাজুরা মনিন্দ্রনাথ মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহার বলেন, ফারিহা সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিয়েছে। সোমবার বাদ এশা বিদ্যালয় মাঠে প্রথম ও কোদালিয়া ঈদগাহ মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, এই দুর্ঘটনায় নিহত ফারিহার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি যশোরের নেতৃবৃন্দ। তারা জেলা প্রশাসকের কাছে দুর্ঘটনায় জন্য দায়ী বাসচালক, হেলপারকে আটক ও দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ফুটওভার ব্রিজ, স্পিড ব্রেকার, জেব্রা ক্রসিং ও ট্রাফিক ব্যবস্থার নিশ্চিতসহ ৫ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেন।
এছাড়া, আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় প্রেসক্লাব যশোরের সামনে ফারিহার মৃত্যুর বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে খাজুরার ছাত্র-জনতার ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.