যশোর প্রতিনিধি
যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল করে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক পরিবারের বিরুদ্ধে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্কুলের মোট ৩৩ শতক জমির মধ্যে ১৯৯৩ সালে স্থানীয় ফরিদা বেগম ও তার ভাই জিয়ারুল ইসলাম রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে জমিটি বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। যদিও বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, তারপর থেকে এটি সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছিল।
সম্প্রতি রোজার ছুটির সময় স্কুল প্রাঙ্গণে বাড়ি নির্মাণের উপকরণ এনে রাখা হয় এবং কোরবানির ঈদের ছুটিতে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. শামশীরা পারভীন জানান, প্রায় ৪ শতক জায়গার ওপর একটি ভবন নির্মাণ শুরু করা হয়, যার মধ্যে অন্তত ২ শতক সরকারি স্কুলের জমি দখল করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী হারুন অর রশিদ ও তার দুই ছেলে—ফাহাদ হোসেন সোহাগ ও মামুনুর রশিদ শাহিন—এই অবৈধ দখল ও নির্মাণকাজের পেছনে রয়েছে। জানা গেছে, তারা রাজনৈতিকভাবে জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পরপরই এই পরিবারটি আচরণে পরিবর্তন আনেন এবং দখলের কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিবাদ উপেক্ষা করে নির্মাণকাজ চলতে থাকলে প্রধান শিক্ষিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার এএসআই মো. মিজানুর রহমান জানান, আদালতের আদেশে তিনি স্কুলে গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করেন। বর্তমানে উক্ত জমিতে ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি রয়েছে।
প্রধান শিক্ষিকা আরও অভিযোগ করেন, নির্মাণ কাজ বন্ধ করাতে গিয়ে জমি দখলকারী পরিবারের সদস্য সোহাগ তাকে পুলিশের সামনেই হুমকি দেন।
এদিকে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুন্সী মো. সোহেল রানা বলেন, “এটি সরাসরি আমাদের দায়িত্ব না হলেও প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এসিল্যান্ডকে জানিয়েছিলাম। তিনি সরজমিনে গিয়ে জায়গাটি মেপে দিয়ে এসেছেন।”
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমি প্রধান শিক্ষককে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছি। তিনি চাইলে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেন। জমির বিষয়টি এসিল্যান্ড দেখে গেছেন।”
তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল আলম বলেন, “আমরা জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী জায়গাটি স্কুলের নয় বরং মালিকানাধীন। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও এসিল্যান্ডকে জানানো হয়েছে।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত ফাহাদ হোসেন সোহাগ বলেন, “আমরাই জমির দাতা। আগের সরকার আমাদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। এসিল্যান্ড এসে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করে গেছেন। এখন স্কুল কীভাবে জায়গার মালিকানা দাবি করে, তা আমার বোধগম্য নয়।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “উপরে কেউ এলেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জায়গাটি স্কুলের রাস্তার অংশ ছিল, যেখানে আমাদের সাইনবোর্ডও লাগানো ছিল।”
এ বিষয়ে দ্রুত স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ এবং বিদ্যালয়ের জমি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.