যশোর প্রতিনিধি
যশোরে রিকশার চাকার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লেগে মারাত্মক আহত হয়েছে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বর্তমানে সে ঢাকার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
আহত শিক্ষার্থীর নাম সুমাইয়া ছায়া (১৮)। সে যশোর সদর উপজেলার দোগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। দুর্ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে, যশোর শহরের শিল্পকলা একাডেমির সামনে। ছায়া তার বোনের বাড়ি খড়কির উদ্দেশ্যে রওনা হলে রিকশায় চলার সময় তার গলায় থাকা ওড়না হঠাৎ রিকশার চাকার সঙ্গে পেঁচিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই ছায়ার গলায় ফাঁস লেগে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
প্রথমে স্থানীয়রা দ্রুত ওড়না কেটে তাকে উদ্ধার করেন এবং যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার ধানমন্ডি জেনারেল অ্যান্ড কিডনি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে মেরুদণ্ডে জটিল অস্ত্রোপচার করেন মিটফোর্ড হাসপাতালের নিউরো সার্জন ডা. ফিরোজ আহমেদ আল-আমিন।
চিকিৎসক জানান, দুর্ঘটনায় ছায়ার ঘাড় থেকে মেরুদণ্ড আলাদা হয়ে যায় এবং স্পাইনাল কর্ড ছিঁড়ে যায়, যা অপ্রতিরোধ্য ক্ষতি। তিনি আরও জানান, “ঘাড়ের ৫ ও ৬ নম্বর হাড়ের সংযোগস্থলে স্পাইনাল কর্ড দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, ফলে ছায়ার শরীরের নিচের অংশ কখনোই আর নড়বে না।”
অস্ত্রোপচারের পর ছায়া সাময়িকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার ফুসফুসে পানি জমেছে এবং অক্সিজেন লেভেল আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এ অবস্থায় তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
ছায়ার বড় বোন শোভা জানান, “বেডে শুয়ে ছায়া ইশারায় জানতে চাইছিল, আমার হাত-পা নড়ছে না কেন? আমি কিভাবে লিখবো, কিভাবে পরীক্ষায় যাব?” – এই প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো পরিবার।
ছায়ার মা মিনি বেগম ও বড় বোন মিতু হাসপাতালে ছায়ার শিয়রে কাঁদতে কাঁদতে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। গ্রামের বাড়িতে ছায়ার বাবা মারফত হোসেন খাওয়া-ঘুম ছেড়ে মেয়ের সুস্থতার আশায় প্রার্থনায় মগ্ন। অন্যদিকে যখন সহপাঠীরা এইচএসসির বাকি পরীক্ষাগুলো দিচ্ছে, তখন ছায়া হাসপাতালে জীবনের সঙ্গে লড়াই করছে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আবারও রিকশায় চলাচলের সময় গলায় ঝুলন্ত কাপড় বা ওড়না ব্যবহারের বিপজ্জনক দিকটি সামনে নিয়ে এসেছে।