মোঃমিজানুর রহমান, কালকিনি (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
মাদারীপুরের কালকিনিতে আড়িয়াল খাঁ নদের পানি কমতে থাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার সাবেহরামপুর ইউনিয়নের দুটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে আতঙ্কে রয়েছে। এদিকে ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ সরকারি সহযোগিতা চেয়ে মানববন্ধন করেছেন নদী ভাঙন কবলতি স্থানীয় বাসিন্দারা।
কালকিনি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাহেবরামপুর ইউনিয়নের নতুন আন্ডারচর লঞ্চঘাট ও উত্তর আন্ডারচর এলাকার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আড়িয়াল খাঁ নদ। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে এই দুই গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দেয়। এ বছরও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়া ওই দুই এলাকায় ভাঙন দেখা গেছে। ইতিমধ্যে একটি গ্রামীণ কাঁচাসড়কের প্রায় ৫০০ মিটার নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে লঞ্চঘাট এলাকার আরও শতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও নতুন আন্ডারচর এলাকার বঙ্গবন্ধু কলেজ, নতুন আন্ডারচর হাজী করিমখানের হাট, ৭৩ নম্বর নতুন আন্ডার প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবারুন উচ্চ বিদ্যালয়, নতুন আন্ডারচর ইমদদুলউলুম দাখিল মাদ্রাসা, আল মাহমুদ হাফিজিয়া মাদ্রাসা, করিমখানের হাট পোস্ট অফিস, গোলপাতা বাজারসহ বেশ কয়েকটি সরকারি বেসরকারি স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াসহ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে মানববন্ধন করেছে ভাঙনের শিকার ক্ষতিগ্রস্তরা।
আন্ডারচর এলাকার বাসিন্দা চাঁন মিয়া (৭০) গত ১০ বছর ধরে নদীর ভাঙনে প্রায় ৩ বিঘা ফসলি জমি আড়িয়াল খাঁর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তাঁর। বর্তমানে নদীর পাড়েই সরকারি জমিতে ছোট একটি টিনসেড ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। জানতে চাইলে চাঁন মিয়া বলেন, ‘ওই নদীর মধ্যে আমার সবই চইলা গেছে। নদীর ওই পাড়ে আমার বাপদাদাগো বাড়িঘর ছিল। এখন আর কিচ্ছু নাই। আমার এই জীবনে তিন বার আমাগো বাড়িঘর নদীর পেটে গেছে। জায়গা-জমি যা ছিলো, সবই শ্যাষ। কতো যে না খাইয়া থাকছি, হিসাব নাই। যাগো নদীতে সব লইয়া যায়, তাগো তো আর কোন অস্তিত্ব থাকে না।
চানমিয়ার মতো একই অবস্থা প্রতিবেশী ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ কৃষক বজলু সরদারের। তিনি বলেন, আমি বোঝার বয়স থেকে সাতবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। এখন আমার নিজের বলে কিছুই নাই। একবার শুনছি, সরকার নাকি আমাগো একখান ঘর দিবো, কই তা–ও আহে না। না দিল কোন ঘর, না দিল কোন খাওন। এক পোলায় বদলা দেয়, তাই দিয়া আমাগো সংসার টিক্কা আছে। আমি কোন কাম করতে পারি না।
নদীর পাড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক আবুল হালিম, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন, ইউপি সদস্য মো. মোকলেশুর রহমান ও শিকক মো. আরাফাত হোসেন প্রমুখ। তাঁরা আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙর রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ ভাঙনের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সরকারি বন্দোবস্ত ও আর্থিক সহযোগিতার দাবি জানানো হয়।
সরেজমিনে চর সাহেবরামপুর ও লঞ্চঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আড়িয়াল খাঁ নদের পানি কমায় নদের পাড়ের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে লঞ্চঘাট থেকে চর সাহেবরামপুর যাওয়ার একমাত্র সড়কটির প্রায় ৫০০ মিটার অংশ নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের অপর পাশেই রয়েছে বেশ কয়েকটি বসতঘর, ফসলি জমি, স্থাপনাসহ একটি বাজার। অনেকে বসতবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে অন্যস্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাদারীপুর কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শুভ সরকার বলেন, ‘কালকিনি সাহেবরামপুর ইউনিয়নের দুটি এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন দেখে গেছে। ওই এলাকা দুটি আমরা পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভাঙন রোধের জন্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফ উল আরেফিন বলেন, ‘লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন কবলিত লোকজনের তালিকা করা হচ্ছে। শিগগিরই তাঁদের সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া ভাঙন রোধ ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.