এস এম শরিফুল ইসলাম স্টাফ রিপোর্টার , নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইলের লোহাগড়ায় তিন বছরের শিশু নুসরাত জাহান রোজা হত্যার ঘটনায় সৎ মা জোবাইদা বেগম (২৫) কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা,অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
বুধবার (৬আগস্ট) দুপুরে নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শারমিন নিগার এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি জোবাইদা বেগম আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। সাজাপ্রাপ্ত জোবাইদা বেগম লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামের সজীব কাজীর স্ত্রী।
আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে সজীব কাজীর সঙ্গে তার প্রথম স্ত্রী রুপা বেগমের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর সজীবের দুই সন্তান, পাঁচ বছর বয়সী ছেলে ইয়াসিন কাজী ও তিন বছর বয়সী মেয়ে নুসরাত জাহান রোজা, দাদা (আবুল খায়ের) সঙ্গে বসবাস করতে।
পরবর্তীতে সন্তানদের কথা চিন্তা করে সজীব কাজী দ্বিতীয় বিয়ে করেন জোবাইদা বেগম কে।
২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে রোজা কে তার ভাই ইয়াসিন কাজী মারধর করলে সে কান্না শুরু করে। এরপর সৎ মা জোবাইদা বেগম তাকে ঘরের একটি কক্ষে নিয়ে যান। সে কান্না থামাচ্ছিল না দেখে একপর্যায়ে জোবাইদা তার মুখ চেপে ধরেন, যার ফলে শ্বাসরোধে রোজার মৃত্যু হয়।
পরে রোজা কে একটি কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে শ্বশুর খায়ের কাজীর ঘরের বারান্দার খাটে রেখে দেন তিনি।
দুপুরে দাদা খায়ের কাজী বাড়িতে ফিরে রোজা কে গোসল করাতে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু তাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে তার স্ত্রী পান্না বেগম কে বিষয়টি জানান। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পান্না বেগম জোবাইদা কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, রোজা বারান্দায় ঘুমাচ্ছে। সেখানে গিয়ে দাদী তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
পরে পরিবারের সদস্যরা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে প্রথমে লোহাগড়া থানায় এবং পরে ময়না তদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ওই দিনই সজীব কাজী ও জোবাইদা বেগম কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। তবে ঘটনার সাথে জড়িত না থাকায় সজীব কাজী কে পরে ছেড়ে দেয় পুলিশ।এ ঘটনায় পরদিন নিহত রোজার দাদা খায়ের কাজী লোহাগড়া থানায় জোবাইদা বেগম কে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বুধবার দুপুরে আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন।
নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান লিটু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।