মফিজুল ইসলাম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে শৈলকুপা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় ১শ গ্রামের মানুষের ফসলি জমি। চারদিকে পানি থইথই করছে। বৃষ্টির পানি আটকে মাঠের পর মাঠ কৃষকের ফসলি জমি ডুবে গেছে। ধান ঘরে তোলার মৌসুম হওয়ায় বিপাকে পড়েছে শত শত কৃষক। সবকিছু পানির নিচে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা। হাজার হাজার হেক্টর জমির ধানক্ষেত এখন পানির নিচে।
একদিকে অতিবৃষ্টি, অন্যদিকে সংকুচিত কালভার্ট। অন্যদিকে পানি নিষ্কাশনের খাল সংস্কার না হওয়ায় এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর, ধলহরাচন্দ্র, দুধসর, নিত্যানন্দনপুর, হাকিমপুর ও আবাইপুর, কাঁচেরখোল, বগুড়া, দুধসর, ত্রিবেণী, মির্জাপুর ও পৌরসভা সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ১শ গ্রাম বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ধসে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও কাঁচা রাস্তা। পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মাঠের পর মাঠ পানি আর পানি এবং এ পানির নিচে তলিয়ে আছে কৃষকের স্বপ্ন।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া নামক স্থানে একটি সংকুচিত কালভার্ট রয়েছে। এই কালভার্ট দিয়ে ঠিকমতো পানি বের হতে না পারায় হাকিমপুর ইউনিয়নের সাধুহাটি, নাগপাড়া, চরপাড়া, বিপ্রবকদিয়া, বকদিয়া, হাকিমপুর, তেঘরিয়া, বরিয়া, মনোহরপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া, নওপাড়া, সোন্দাহ, ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের ধাওড়া, খাসবকদিয়া, চর ধলহরাচন্দ্র, ছাইভাঙা, ডাউটিয়া, কুশবাড়িয়া, নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নের শেখরা বাজারের পাশে সংকুচিত কালভার্টের কারণে শেখরা, বাগুটিয়া, মনোহরপুর, আশুরহাট, গোয়ালবাড়িয়া, ফিরাগাতি, সাপখোলা, গোপালপুর, দুধসর ইউনিয়নের কচুয়া, মলমলি, ভিক্ষেকর, টংবিলা, খড়িবাড়িয়া, দুধসর, বগুড়া ইউনিয়নের বগুড়া, কমলনগর, স্বরূপনগর, তেঁতুলিয়া, দলিলপুর, রত্নাহাট, আবাইপুর ইউনিয়নের যুগ্নী, বাঘিনী, রতনপুর, রাধাকান্তপুর, রূপদাহ — এ ছাড়া পৌর এলাকার বেশ কিছু গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার ১শ গ্রামের ফসলি জমি এখন পানির নিচে।
ধান, মরিচ, বেগুনসহ সবজি ক্ষেত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দেখা যায়। অবিরাম বৃষ্টি, সংকুচিত কালভার্ট ও পানি নিষ্কাশনের খাল দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ইসরাইল হোসেন জানান, পাইকপাড়া গ্রামে অবস্থিত এই কালভার্টটি আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই স্থানে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বেশকিছু গ্রামের মাঠের পর মাঠ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে।
টংবিলা গ্রামের কৃষক স্বপন সাহা জানান, শেখরা নামক স্থানে একটা সংকুচিত খাল থাকায় এই ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষের ফসলি জমি এখন পানির নিচে। পানিতে সবকিছু তলিয়ে গেছে। এখন আমরা কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী বিকর্ণ দাস বলেন, এবার অতিবৃষ্টিতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি জলাবদ্ধতার হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান খান বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। যেসব জায়গায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সেইসব জায়গায় পানিপ্রবাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করছি। এবারের বৃষ্টিতে কৃষকরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস বলেন, বৃষ্টির কারণে মাঠের পর মাঠ পানিতে ডুবে আছে। এতে কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। পানিপ্রবাহ সচল রাখতে আমরা কিছু বাঁধ অপসারণ করছি। এ ছাড়াও পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় থাকা বিভিন্ন খালগুলো সংস্কার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.