মোঃ শাহ জালাল, বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলা ছাড়াও ঢাকা বিভাগের মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ কিয়দংশ এবং খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার অনেক রোগীর চিকিৎসার ভরসাস্থল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল। ১৯৬৮ সালে মাত্র ৫০০ শয্যার অবকাঠামো নিয়ে হাসপাতালটি নির্মিত হয়। ৫৮ বছর পরও তেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি।
বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৭০০ নতুন রোগী ভর্তি হন। এতে অন্তঃবিভাগে গড়ে ৩ হাজার এবং বহিঃবিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রতিটি রোগীর সঙ্গে গড়ে ৩ জন স্বজন বা দর্শনার্থী থাকেন। ফলে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার দর্শনার্থী আসেন। এর সঙ্গে হাসপাতালের ৫০০ চিকিৎসক, ১ হাজার নার্স, ৫০০ স্টাফ এবং কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী ও সেবাদানকারী যুক্ত হয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
তবে এত মানুষের চাপ সামাল দিতে না পারায় হাসপাতালের পরিবেশ, টয়লেট, চিকিৎসাসেবা ও ব্যবস্থাপনায় দেখা দেয় চরম অব্যবস্থাপনা। শয্যার তুলনায় ছয় গুণ বেশি রোগী থাকায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে মেঝে ও বারান্দায়। এতে বিপাকে পড়ছেন হাসপাতালের স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স।
সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। গত রবিবার হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর ২০ দফা সংস্কার পদক্ষেপের তালিকা হাসপাতালের প্যাডে লিখিতভাবে প্রকাশ করেন।
সংস্কারসমূহ:
১। অর্থ আদায়ের অভিযোগে সব স্বেচ্ছাসেবী ট্রলি ম্যানকে বহিষ্কার করে নতুন জনবল দিয়ে ট্রলি চালানো হচ্ছে।
২। পুরাতন ট্রলি মেরামত ও নতুন ট্রলি সরবরাহ।
৩। ৭টি মনিটরিং টিম গঠন করে নিয়মিত নজরদারি।
৪। ১০০টি সিলিং ফ্যান স্থাপনের কাজ চলছে।
৫। টয়লেট পরিষ্কারে ৯০ জন হরিজন কর্মী নিয়োগ।
৬। ৮টি অটোমেটিক ক্লিনিং মেশিন চালু; আরও ১২টি আসবে সেপ্টেম্বরে।
৭। জীবাণুনাশে ২০টি স্প্রে মেশিন চালু।
৮। টয়লেটের দরজা-জানালা মেরামতের কাজ চলছে।
৯। ১০০টি নতুন বেড অর্ডার; চলতি সপ্তাহেই স্থাপন।
১০। দালাল, হকার ও বহিরাগতদের আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর।
১১। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
১২। এক ওয়ার্ড মাস্টার ও একাধিক স্টাফ সাময়িক বরখাস্ত।
১৩। বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ বাক্স বসানো ও ব্যবস্থা গ্রহণ।
১৪। নষ্ট লিফট মেরামতের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে অবহিত।
১৫। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা জোরদারে নতুন চাহিদা পাঠানো।
১৬। নার্সদের ভালো ব্যবহার ও দায়িত্ব পালনে সতর্ক করা হয়েছে।
১৭। ৪৬০ শয্যার নতুন ভবন ২০২৬ সালের মার্চে হস্তান্তরের পরিকল্পনা।
১৮। শিশু হাসপাতাল চালুর কাজ চলছে; ডিসেম্বরের মধ্যে হস্তান্তর হবে।
১৯। জরুরি যন্ত্রপাতির চাহিদা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
২০। লিলেন প্লান্ট আধুনিকায়নের কাজ আগামী ২ মাসে সম্পন্ন হবে।