মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
চলতি বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে—এমন নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
ফলে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৮৫ লাখ শিক্ষার্থী এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি অংশ শিক্ষার্থীদের মানসিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখিয়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত চিত্রটা কী?
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভরকেন্দ্র। এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, যারা শিক্ষা অর্জনের জন্য নির্ভর করে সরকারের সহায়তা ও প্রণোদনার ওপর। এদের জন্য বৃত্তি মানে শুধু পুরস্কার নয়—এটি টিকে থাকার অনুপ্রেরণা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা যথার্থই বলেছেন, সরকার সবাইকে শিক্ষা দিতে চায়, কিন্তু তার জন্য সবাইকে সরকারি বিদ্যালয়ে আসতে হবে।
সচেতন মহলের দাবি, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাঠামোগত সীমাবদ্ধতায় ভুগছে, যেগুলোর ওপর সরকারি তদারকি সীমিত। ফলে মান নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি দেখা যায়। করোনাকালে হাজার হাজার কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে, যেখানে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের কোনো দায় ছিল না। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত অস্থায়ী ও অনির্ভরযোগ্য—যেখানে নেই কোনো নিয়ম, নেই মান নিয়ন্ত্রণ।
অনেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারাকে বৈষম্য বলছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই কিন্ডারগার্টেনগুলো কি সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়?
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন ১৯৯০ অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষা হবে সার্বজনীন, অবৈতনিক ও রাষ্ট্র-নির্ধারিত। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সেই কাঠামোর মধ্যে নেই। তাহলে তাদের শিক্ষার্থীদের সরকারি সুবিধা চাইবার অধিকার কোথায়?
বেসরকারি স্কুলে অনেক শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন, নামের বানানসহ নানা ভুল থেকে যায়, যা পরবর্তীতে এসএসসি বা এইচএসসিতে গিয়ে বড় সমস্যা তৈরি করে। সরকারি বিদ্যালয়ে এসব বিষয় সরকারি নজরদারিতে শুদ্ধভাবে হয়, ফলে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ বেশি নিরাপদ ও স্থিতিশীল।
এছাড়াও সরকারি বিদ্যালয়ে রয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও স্থায়ী শিক্ষক, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা উপকরণ, উপবৃত্তি ও মিড-ডে মিল, কমন কারিকুলাম ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীর তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষণের সুবিধা ইত্যাদি।
এখন সময় অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার। কিন্ডারগার্টেনের বাহারি বিলবোর্ড আর ভৌতিক নাম নয়—সন্তানকে দিন রাষ্ট্র স্বীকৃত, নিয়মতান্ত্রিক, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য শিক্ষা। সরকারি বিদ্যালয়েই গড়ে উঠুক আগামীর বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুনা লায়লা বলেন, “বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে না রাখার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী এবং শিশুদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তার কথা ভেবে নেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.