অশোক মুখার্জি, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
বঙ্গোপসাগরে জেলের জালে ধরা পড়েছে এক বিরল প্রজাতির রঙিন সামুদ্রিক মাছ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Pomacanthus imperator, সাধারণত পরিচিত “অ্যাঞ্জেলফিশ” নামে। ৪ আগস্ট কলাপাড়া উপকূলসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছটি জেলেদের জালে ধরা পড়ে। রবিবার (১০ আগস্ট) সকালে মহিপুর বন্দরে মাছটি নিয়ে আসলে স্থানীয় মৎস্য বন্দরে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়দের অনেকে একে “এ্যাকুরিয়ামের মাছ” নামেও চিনে থাকেন, কারণ এটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয় ও রঙিন। মাছটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ ইঞ্চি। গায়ে গাঢ় নীল পটভূমিতে হলুদ অনুভূমিক দাগ এবং মুখে নীল-কালো মাস্কের মতো প্যাটার্ন রয়েছে, যা একে অন্য মাছের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে।
জেলে আনোয়ার মাঝি জানান, গত সপ্তাহে “এফবি জারিফ তারিফ” নামের একটি ফিশিং ট্রলারে অন্যান্য মাছের সঙ্গে এটিও ধরা পড়ে। প্রথমে তারা এটিকে চিনতে পারেননি। তবে বন্দরে নিয়ে আসার পর মাছটি ঘিরে মানুষের ভিড় জমে।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী সোবহান শিকদার বলেন, “এমন মাছ আমি জীবনে প্রথম দেখলাম। এটা একুরিয়ামে থাকা মাছের মতো সুন্দর। আমি ছবি তুলে পরিবারের সবাইকে দেখিয়েছি।” আরেক ব্যবসায়ী ছগির আকন জানান, মাছটি বাসায় নিয়ে যান তিনি, তবে এটি খাওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নন।
এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ডফিশ-বাংলাদেশ–এর গবেষণা সহকারী মোঃ বখতিয়ার রহমান বলেন, “অ্যাঞ্জেলফিশ” একটি উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবাল প্রাচার পরিবেশের মাছ, যা ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের উপকূল কাদা ও বালুময় হওয়ায় সাধারণত এ ধরনের মাছ এখানে দেখা যায় না। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও সামুদ্রিক স্রোতের পরিবর্তনের ফলে কিছু প্রজাতি নতুন অঞ্চলে চলে আসছে বলে জানান তিনি।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, “মাছটি উপকূলীয় অঞ্চলে সচরাচর দেখা যায় না। এটি গভীর সমুদ্রের মাছ। জেলেদের জালে এমন মাছ ধরা পড়া ভালো লক্ষণ। এতে জেলেরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।”
স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন, মাছটি বিক্রির জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং কোনো মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান চাইলে এটি হস্তান্তর করতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা।