কালাই, জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় পোলট্রি হ্যাচারী মালিকেরা ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়েছেন। অতিরিক্ত উৎপাদন ও বাজারে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় এক দিনের মুরগীর বাচ্চার দাম উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এতে করে প্রতিটি বাচ্চায় মালিকদের ১৩ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে।
পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, অনেক হ্যাচারী মালিক তাদের প্যারেন্ট স্টক বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। চলমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে কালাই উপজেলার পোলট্রি খাত বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় হ্যাচারী মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক দিনের সাদা ব্রয়লার জাতের বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ৪৫ টাকা, রঙিন ব্রয়লারে ৩৮ টাকা এবং সোনালী জাতের বাচ্চায় ১৮ টাকা। অথচ বর্তমানে এসব বাচ্চা বাজারে বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১২, ১০ ও ৫ টাকায়। এমনকি কখনও কখনও সোনালী জাতের বাচ্চা বিক্রি না হওয়ায় বিনা মূল্যে বিতরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
মের্সাস শাকিলা পোলট্রি ফার্ম ও হ্যাচারীর ম্যানেজার মোফাজ্জল হোসেন মাহিন বলেন,“আমরা সোনালী জাতের বাচ্চা উৎপাদন করি। প্রতি বাচ্চায় ১৮ টাকা খরচ হলেও এখন চার থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতিটি বাচ্চায় ১৩ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে। মাগনা দিতেও কেউ নিতে চায় না।”
পদ্মা ফিড অ্যান্ড চিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল হক বলেন,“গত এক মাস ধরে প্রতিটি বাচ্চায় জাতভেদে ১৩ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হ্যাচারীগুলো টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। মিডিয়াও এই সংকটে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে না। যখন মুরগীর দাম বাড়ে তখন প্রচুর নিউজ হয়, কিন্তু এখন দাম কমে বিপর্যয় নেমে এলেও সেভাবে আলোচনায় আসে না।”
জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলায় বর্তমানে ৫৮টি হ্যাচারী সচল রয়েছে। এরমধ্যে ৫৩টি থেকে বছরে প্রায় ৮ কোটি এক দিনের মুরগীর বাচ্চা উৎপাদিত হয়। এই জেলারই বিশেষত্ব, এখানেই উদ্ভাবিত হয়েছে সোনালী জাতের মুরগী, যার মাংসের স্বাদ দেশী মুরগীর মতো হওয়ায় সারাদেশে এর চাহিদা রয়েছে।
তবে সম্প্রতি অতিরিক্ত গরম ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে অনেক খামারী নতুন করে খামার শুরু করতে আগ্রহী নন। বাজারে মুরগীর দামও তুলনামূলকভাবে কম, ফলে খামারীরা বাচ্চা কিনছেন না।
কালাই উপজেলার দুই প্রান্তিক খামারী আবুল কাশেম ও মোজাহার বলেন,
“এক সময় সোনালী মুরগীর সোনালী বিপ্লব হয়েছিল। কিন্তু এখন খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছি।”
জয়পুরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন,
“জেলায় বছরে ৮ কোটি বাচ্চা উৎপাদিত হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। তবে এখন বাজারে সংকট থাকায় চাহিদা কমেছে। আশা করছি, এই পরিস্থিতি স্থায়ী হবে না।”