রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে স্থানীয় বিরোধে হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মিন্টু মোল্লার বিরুদ্ধে। দলের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, তিনি একটি ব্যবসায়িক বিরোধে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, দিঘলিয়া উপজেলার একটি ইটভাটার মালিকানা নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী খলিল মাদবর এবং তার সাবেক অংশীদার সেলিম রেজা ওরফে আবদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। ইটভাটার এই বিরোধে শুরুতে পরোক্ষভাবে জড়ালেও পরে সরাসরি একপক্ষ হয়ে সামনে আসেন বিএনপি নেতা মিন্টু মোল্লা। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষ দিঘলিয়া থানায় হাজির হলে পুলিশের উপস্থিতিতেই সৃষ্টি হয় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি।
ব্যবসায়ী খলিল মাদবরের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ও সেলিম রেজা যৌথভাবে ইটভাটা পরিচালনার শুরু করলেও তা ছিল খলিলের নামে রেজিস্ট্রিকৃত। ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে সেলিম রেজা সরে গেলে খলিল এককভাবে ভাটার যাবতীয় ঋণ পরিশোধ করেন। পরে ২০১৯ সালে সেলিম রেজা মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করলে তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পিবিআই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে এবং আদালত খলিল মাদবরের পক্ষে রায় দেন।
রায় পাওয়ার পর খলিল ভাটাটি হেদায়েত মোড়ল ও হায়দার মোড়লের কাছে লিজ দেন। এরপর হেদায়েতের কাছ থেকে ঠিকাদার হিসেবে মিন্টু মোল্লা ১০ লাখ টাকার ইট সংগ্রহ করলেও কোনো অর্থ পরিশোধ করেননি বলে অভিযোগ করেন খলিল। উল্টো মিন্টু মোল্লা ইট বিক্রিতে বাধা সৃষ্টি করেন এবং হুমকি প্রদান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকা চাইতে গেলে হেদায়েত মোড়ল মারধরের শিকার হন বলেও জানা যায়।
খলিলের দাবি, ইটভাটার পুরনো বিরোধের জেরে মিন্টু মোল্লা সেলিম রেজাকে ব্যবহার করে থানায় তার (খলিলের) বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করান। তিনি পুলিশি তলবে থানায় উপস্থিত হয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করলে মিন্টু মোল্লা সেখানেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং তাকে গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। এর পর থেকে খলিল মাদবর নিয়মিত হুমকির মুখে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, মিন্টু মোল্লা বিএনপির পরিচয় ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে দখল, চাঁদাবাজি ও মামলাবাজির মতো অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত। তার কার্যকলাপে দলের ভাবমূর্তি দিনদিন ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অনেকেই দলীয় পদ থেকে তার অপসারণ দাবি করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মিন্টু মোল্লা জানিয়েছেন, তিনি ঠিকাদারি পেশার সূত্রে ইটভাটার সঙ্গে পূর্বে একটি চুক্তি করেন, যেখানে খলিল মাদবর ও সেলিম রেজা উভয়েরই স্বাক্ষর ছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর খলিল এককভাবে ভাটাটি লিজ দেন, যা জানার পর সেলিম রেজা মালিকানা দাবি করে থানায় অভিযোগ করেন। থানায় সেই চুক্তিপত্র সাক্ষ্য হিসেবে মিন্টু মোল্লা উপস্থাপন করেন। মিন্টুর দাবি, তার এই পদক্ষেপ খলিলের বিরুদ্ধে প্রমাণ হয়ে দাঁড়ানোয় খলিল এখন তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।
দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচএম শাহীন জানান, ইটভাটার মালিকানা ও আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি বিরোধের জেরে উভয় পক্ষ থানায় উপস্থিত হলে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির আহ্বান জানানো হয়। আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এবং উভয় পক্ষকেই নোটিশ প্রদান করা হয়।
ঘটনার পর দিঘলিয়ায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা এভাবে বিরোধে জড়িয়ে পড়ায় সংগঠনটি আরও চাপে পড়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতাকর্মী।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.