মাদ্রাসায় আরবি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
বুধবার (১ অক্টোবর) ঢাকায় সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার সভাকক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ২৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ধর্ম উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া একটি ঐতিহ্যের স্মারক। এটি কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং উপমহাদেশের মুসলিম সমাজের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ সংস্কার ও জাতীয় জাগরণের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়।
তিনি বলেন, আড়াইশো বছরের আমাদের ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় আলিয়া পদ্ধতির মাদ্রাসার অবদান সোনার অক্ষরে লিখে রাখার মতো। মাদ্রাসা-ই-আলিয়া থেকে ডিগ্রি অর্জন করে হাজার হাজার ছাত্র আমাদের সচিবালয়, সেনাবাহিনী, প্রশাসন যন্ত্র, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। এ মাদ্রাসার অবদান অবিস্মরণীয়। এখান থেকে অনেক যোগ্য ব্যক্তি তৈরি হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, ঢাকায় আলিয়া মাদ্রাসা যুগ যুগ ধরে এই সমাজ, এই রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আগামীতে এ প্রতিষ্ঠান দেশ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি ছোট ছোট মতপার্থক্য ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান। মাদ্রাসা-ই-আলিয়া থেকে ঐক্যের বাতাবরণ ছড়িয়ে পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উপমহাদেশে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনালগ্নের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেক চড়াই-উৎরাই, ত্যাগ-কোরবানির মাধ্যমে আলিয়া পদ্ধতির মাদ্রাসার অভিযাত্রা শুরু হয়। ইংরেজরা এটাকে ভালোভাবে দেখেনি, তারা সিলেবাসকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তারপরও সে সময়ের উলামায়ে কেরামরা দ্বীনি শিক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। উপদেষ্টা তদানীন্তন দ্বীনদার মুসলমান, উলামায়ে কেরামদের অবদানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
ড. খালিদ আরও বলেন, কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা যখন পরিপূর্ণভাবে চালু হয় তখন ইংরেজরা প্রস্তাব দিলেন, একজন ইংরেজকে এ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নিয়োগ দিতে হবে। এটা না হলে মাদ্রাসা চালু করতে দেওয়া হবে না। সে সময়কার উলামায়ে কেরামরা এটা মেনে নিলেন, বিপদে পড়ে। এটা না করলে মাদ্রাসা টিকে থাকত না। মাদ্রাসা না থাকলে আমাদের মাথায় টুপি, দাড়ি, তাহজিব, তমদ্দুন, ধর্ম, মূল্যবোধ সবকিছু বিসর্জন যাবে। মাদ্রাসাই এই মূল্যবোধ টিকিয়ে রেখেছে।
উপদেষ্টা বলেন, আমি নিজে মাদ্রাসার ছাত্র। আমার প্রথম তালিম আলিফ, বা, তা, ছা। আমি পিএইচডি ডিগ্রি পর্যন্ত অর্জন করেছি। মাদ্রাসাই আমার ভিত্তি। আমি মাদ্রাসায় পড়েছি, এটাই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। এরপর আমি যে সাধারণ শিক্ষা অর্জন করেছি সেটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, অতি আধুনিক বিষয়ের ভারে মাদ্রাসা শিক্ষার যে ঐতিহ্য— কোরআন, হাদীস, ফিকহ প্রভৃতি কোণঠাসা হয়ে গেছে। আমরা অবশ্যই আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করব। তবে মাদ্রাসা শিক্ষা হচ্ছে বিশেষায়িত শিক্ষা। মাদ্রাসা হলো আলেম তৈরির কারখানা। তিনি মাদ্রাসায় আরবি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। অন্যান্যদের মধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ওবায়দুল হক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.