জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নে সরকারি ভিজিডি (VGD) কর্মসূচিতে প্রকৃত দুঃস্থ নারীদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনদের নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভিজিডির সুবিধাভোগী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে জনপ্রতি ২ থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করা হয়েছে। এছাড়া তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রতিটি কার্ডধারীর কাছ থেকে আরও ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ভুক্তভোগী।
ভিজিডির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ৪৪০ জনের মধ্যে প্রায় ৫০ জনই প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের আত্মীয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ বড় পাকা বাড়ির মালিক, কেউ বা ৬-৮ বিঘা ফসলি জমি ও পুকুরের মালিক। এরা কেউই সরকারি সহায়তা পাওয়ার যোগ্য নন।
তালিকাভুক্ত স্বজনদের মধ্যে রয়েছেন—২১২ নম্বরে মাফুজা খাতুন ও ২৩০ নম্বরে সেলিনা খাতুন (বড় ভাইয়ের স্ত্রী), ২১০ নম্বরে মামি খোতেজা, ২১৪, ২১৬ ও ২১৭ নম্বরে চাচি রিমা, আলেয়া ও আমেনা বেগম, ১৮২ নম্বরে খালা শেফালী বেগম এবং ১৯১ নম্বরে ভাবী রাজিয়া সুলতানা। এমনকি তার এক ভাগনী যিনি একজন চিকিৎসক, তাকেও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে তার নাম বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে বাঘোপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মহসিন আলী বলেন, “শফিকুল একজন দুর্নীতিবাজ। গরিবের হক আত্মীয়দের হাতে তুলে দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ কাজেও নাকি ঘুষ দিতে হয়।”
একজন সুবিধাভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমি গরিব মানুষ। কার্ড পাওয়ার জন্য শফিকুল আমাকে ৩ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করেছে। আল্লাহ বিচার করবেন।”
অভিযোগের বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে তালিকায় ঢোকাইনি। সবকিছু মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তর এবং ট্যাগ অফিসার যাচাই-বাছাই করে করেছেন। আত্মীয়দের নাম থাকলেও সেটা আমার করার কিছু না।”
তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, “প্রকৃত গরিব হলেও কেউ জনপ্রতিনিধির আত্মীয় হতে পারে, তাতে সমস্যা নেই। তবে শফিকুলের ভাগনীর নাম ছিল, সেটি সত্য। তবে তার স্ত্রীর নাম তালিকায় ছিল না।”
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা লায়লা নাসরিন জাহান জানান, “শফিকুল ইসলাম মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের স্ত্রী ও আত্মীয়দের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তার স্ত্রী ও একজন চিকিৎসক ভাগনীর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি আত্মীয়দের বিষয়ে তদন্ত চলছে।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আল জিনাত বলেন, “নীতিমালার ভিত্তিতেই তালিকা করা হয়েছে। কেউ ভুয়া তথ্য দিয়ে আত্মীয়দের নাম ঢোকালে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”