আবদুল জলিল, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সোনামুখী মেলাকে ঘিরে এলাকায় বইছে উৎসবের আমেজ। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রায় তিনশ বছর ধরে ইছামতি নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই ঐতিহাসিক মেলা। প্রতিবারের মতো এবারও মেলাকে কেন্দ্র করে সোনামুখী ও আশপাশের গ্রামগুলোতে জমে উঠেছে উৎসবের পরিবেশ।
এই মেলা শুধু বিনোদনের আয়োজন নয়, বরং একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্মও বটে। সিরাজগঞ্জ সোনামুখী হয়ে বগুড়ার ধুনট-শেরপুর পর্যন্ত আন্তঃজেলা সড়ক থাকায় এর গুরুত্ব ব্যাপক। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের পণ্যসামগ্রী নিয়ে এই মেলায় অংশ নেন। তবে মেলাটি এলাকাবাসীর কাছে বিশেষভাবে পরিচিত ‘কাঠের মেলা’ হিসেবে। আশপাশের গ্রামের কারিগররা মেলা শুরুর কয়েক মাস আগে থেকেই কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করে থাকেন। মেলা শুরু হলে বরাদ্দ পাওয়া জায়গায় এসব পণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।
মেলায় বিক্রি হচ্ছে সোফাসেট, আলমিরা, খাট, ওয়ারড্রব, ড্রেসিং টেবিল, মিটসেফ, ডাইনিং টেবিলসহ নানা ধরনের আসবাবপত্র। কাঠের পাশাপাশি স্টিলের আসবাবও পাওয়া যাচ্ছে এখানে। আয়োজক কমিটির সদস্য ও বিএনপি নেতা দোলা সরকার জানান, প্রতি বছর মেলায় কয়েক কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়।
এবার দুর্গাপূজার ছুটি থাকায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মেলায় যোগ হয়েছে বাড়তি আনন্দ। আশপাশের অন্তত ১০-১২টি গ্রামের জামাই-মেয়েরা নাইওরে আসে শ্বশুরবাড়ি। বৌ-ঝি, জামাইদের জন্য নতুন জামা-কাপড়, ধুতি, শাড়ি, পাঞ্জাবী কেনাকাটা এবং আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে বাংলার হারানো সংস্কৃতি যেন ফিরে আসে।
যদিও এবার যাত্রাপালার দল আসেনি, তবে শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, নৌকাদোলা, পুতুল নাচ ও মোটরসাইকেল শো। মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি গঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী পরিচালনা কমিটিও।
মেলার ইজারাদার ও বিএনপি নেতা ফজলুল হক জানান, “আমরা দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করেছি। মেলাও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নানা উপকমিটি গঠন করে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর থেকে মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।”