ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়। দেশের অন্যতম ব্যস্ততম এই এলাকা প্রতিদিন ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের হাজারো যানবাহনের চাপ সামলায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কের চেহারা ছিল ভাঙাচোরা, খানাখন্দে ভরা। চলাচলকারীদের দুর্ভোগ যেন শেষ হতেই চায়নি।
হঠাৎ করেই এখন সেই ভাঙা রাস্তায় শুরু হয়েছে ‘জরুরি’ মেরামতের ব্যস্ততা। কারণ, আগামীকাল বুধবার সড়ক ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আসবেন, তাই।
গত ১ অক্টোবর থেকে পুরো সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে চলছে হইচই। কেউ ইট ফেলছে, কেউ বালু দিচ্ছে, কেউবা গর্তে বিটুমিন ঢালছে। পাশেই জ্যামে আটকে আছে পণ্যবোঝাই ট্রাক, দূরপাল্লার বাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। বাতাসে গরম বিটুমিনের তীব্র গন্ধ আর কাজের চেঁচামেচিতে চারদিক সরগরম। ৬০০ থেকে ৭০০ মিটার এলাকায় কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে গোলচত্বর অংশে ১২ মিটার প্রস্থ ও ১৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য, আর গোলচত্বর থেকে সিলেটমুখী সরাইল কুট্টাপাড়া খেলার মাঠ পর্যন্ত ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থে তিন স্তরে ইট ও বালু বিছানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সরেজমিনে দেখা মেলে, সরাইল বিশ্বরোড গোলচত্বরে তোড়জোড় করে চলছে মহাসড়ক মেরামতের কাজ। আগামীকাল বুধবার উপদেষ্টার পরিদর্শনের কথা থাকলেও মঙ্গলবার বিকেল ৫টা অবদি মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্নের চিত্রটি দৃশ্যমান। তবে এই কাজের ফলে রাস্তা সংকুচিত হয়ে যানজট তৈরি হয়েছে। যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।
স্থানীয় এক চা বিক্রেতা হেসে বলেন, মাসের পর মাস এই রাস্তা এমনই ছিল। কেউ দেখত না। এখন শুনছি বড় সাহেব আসবেন, তাই এমন তড়িঘড়ি কাজ শুরু হইছে!
সরাইলের স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল মিয়া, রহমত হোসেন, আরিফসহ অনেকেই ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, গর্তে পড়ে গাড়ির চাকা ভেঙে যায়, মানুষ পড়ে আহত হয়, তাতে কারও মাথা ব্যথা ছিল না। এখন উপদেষ্টা আসবে শুনে রাতারাতি ইট-বালু ফেলছে। এই রাস্তায় কাজ শেষ হবে কি, নাকি আবার দেখানোর জন্যই কাজ, তা বুঝি না।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর অন্যতম প্রধান সংযোগ সড়ক। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত অংশটিতে দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দ, জলাবদ্ধতা ও গর্তে পরিণত অবস্থা। পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের অভিযোগ, এখানে চলতে গেলে গাড়ির থেকেও ধৈর্যের পরীক্ষা বেশি লাগে।
সওজের স্থানীয় এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওপরে নির্দেশ এসেছে, রাস্তার ভাঙা অংশগুলো যেন অন্তত চোখে ভালো দেখায়। তাই আপাতত পাথর-বালু ও ইট ফেলে সমান করা হচ্ছে। স্থায়ী কাজ পরে হবে।
তবে এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, উপদেষ্টা না এলে হয়তো রাস্তাটা এমনই পড়ে থাকত। আবার কেউ হতাশ গলায় বলছেন, প্রতিবার সফরের আগে কাজ শুরু হয়, পরে আবার আগের মতো ভাঙা পড়ে থাকে।
সরাইলের পরিবহন চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এখন চাই স্থায়ী সমাধান। চোখে দেখানোর জন্য না, বাস্তব উন্নয়ন হোক।
আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ জানান, আশুগঞ্জ থেকে খাঁটিহাতা পর্যন্ত সড়ক অংশে কিছু জটিলতা ছিল। মাঝখানে কাজ কিছুদিন বন্ধও রাখতে হয়েছিল। পরে প্রকল্পের ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে, এর ফলে বাজেটও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছি। দু-তিন দিনের মধ্যেই মূল স্থায়ী কাজ শুরু হবে। কাজ এগিয়ে নিতে এখন আর কোনো বাধা নেই। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই প্রকল্পে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পে যুক্ত অনেক ভারতীয় শ্রমিক নিজ দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। আগে প্রায় তিনশ শ্রমিক কাজ করতেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যে ফিরে এসে কাজে যোগ দিয়েছেন। আশুগঞ্জ থেকে সরাইল অংশে পূর্ণমাত্রায় কাজ শুরু হলে আরও শ্রমিক যুক্ত হবেন, ফলে কাজের গতি বাড়বে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের কাজ বহু বছর ধরেই চলমান। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে কাজের গতি তুলনামূলক ধীর। আশুগঞ্জ নৌ বন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড হয়ে আখাউড়া পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় প্রায় আট বছর আগে। পাঁচ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি করছে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রস্ট্রাকচার লিমিটেড। ভারতীয় ঋণ ও দেশীয় অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ১৬০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.