রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার তেরখাদা উপজেলার বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবার খেয়ে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার খাওয়ার পর অনেকেই পেটের পীড়া ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
সম্প্রতি উপজেলার ভূমি অফিসে জমির রেজিস্ট্রির কাজে গিয়ে স্থানীয় একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খান সমীর মুনি নামের এক ব্যক্তি। খাবার খাওয়ার পর থেকেই তিনি মারাত্মক পেটের পীড়ায় ভোগেন এবং প্রায় এক সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। এমন অভিজ্ঞতা শুধু সমীর মুনির নয়—তেরখাদা, কাটেংগা, জয়সেনা ও আশপাশের বাজারের বহু মানুষ একইভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় সদরসহ ছয়টি ইউনিয়নে শতাধিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোরই নেই ব্যবসায়িক লাইসেন্স, আবার কর্মচারীদেরও নেই কোনো স্বাস্থ্য সনদ। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই খাবার তৈরির পরিবেশ নোংরা, অপরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যবিধি-বহির্ভূত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁয় খোলা জায়গায় ধুলাবালির মধ্যে রাখা হচ্ছে পরোটা, চপ, পুড়ি, জিলাপীসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী। রান্নার ঘরগুলোতে ময়লা, মাছি ও তেলাপোকার উপদ্রব দেখা গেছে। রান্নায় ব্যবহৃত তেল একাধিকবার ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বাহ্যিকভাবে হোটেলগুলোর সাজসজ্জা আকর্ষণীয় হলেও ভেতরের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনেক সময় বাবুর্চি ও সহযোগীদের শরীর থেকে ঘাম ঝরে পড়ছে খাবারের মধ্যে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে খাবারে পোকা, পিপড়া, সুতলী ও অন্যান্য অখাদ্য উপাদানও পাওয়া গেছে।
অধিকাংশ হোটেলেই বিশুদ্ধ ও আর্সেনিকমুক্ত পানির ব্যবস্থা নেই। নোংরা স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও অস্বাস্থ্যকর রান্নাঘরের কারণে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সচেতন মহল বলছেন, এসব অনিয়ম রোধে প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি ও অভিযান প্রয়োজন। অন্যথায় জনগণের ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্যানিটারি কর্মকর্তা জুয়েল রানা বলেন,
“নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরির প্রমাণ মিললে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত অভিযান বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন, যাতে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং খাদ্যে ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের এই চিত্রের অবসান ঘটে।