দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও পশু হাসপাতাল চরম জনবল-সংকটে ভুগছে। এরফলে প্রয় সাড়ে ৪ হাজার খামারি ও কয়েক লাখ প্রান্তিক কৃষক চরম বিপাকে পড়েছেন। একমাস আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পর জনবল-সংকটে থাকা এই কার্যালয়টি আরও নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ দপ্তরে ১১টি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র একজন ড্রেসার ও একজন উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (প্রাণিস্বাস্থ্য)। বাঁকী ৯টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ভেটিনারি সার্জন (ভিএস) পদটি শুন্য রয়েছে প্রায় ৪ বছর। এরমধ্যেও একমাত্র উপ-সহকারী কর্মকর্তা বর্তমানে অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় কার্যত পুরো অফিসের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। মাসখানেক আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বদলি হওয়ায় দৌলতপুরের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী মিরপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে। কিন্তু নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় দৌলতপুরে নিয়মিত উপস্থিত হয়ে পশুর চিকিৎসাসেবা দেয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে স্থানীয় খামারিরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দৌলতপুরে প্রায় ৮ লাখ মানুষের বসবাস। বৃহৎ এ উপজেলায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি গবাদিপশু ও ১০ লাখের বেশি হাঁস-মুরগি রয়েছে। কৃষি ও পশুপালন এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার অন্যতম উৎস। কিন্তু চিকিৎসক সংকটে পশুগুলো সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। আবার অসুস্থ হলেও বঞ্চিত হচ্ছে সুচিকিৎসা থেকে। এতে খামারিরা বাধ্য হচ্ছেন গ্রাম্য ও অশিক্ষিত হাতুড়ি পশু চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে। ফলে পশু মৃত্যুর হারও বাড়ছে, বাড়চে খরচও।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে দৌলতপুরে প্রকল্পভিত্তিক আরও ৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। তবে তাঁদের নিয়োগের মেয়াদ চলতি বছরের শেষ দিকে ও ২০২৬ সালের ফেব্রæয়ারি নাগাদ শেষ হবে। এর মধ্যে ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প’-এর ৪ জন এবং ‘উন্নত জাতের ঘাস চাষ প্রকল্প’-এর একজন দায়িত্বে রয়েছেন।
উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের এনএসআর এ্যাগ্রো ফার্ম এ্যান্ড ফিসারিজের দায়িত্বপ্রাপ্ত নাইম ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে জনবল-সংকটের কারণে আমরা সঠিক সময়ে পশুগুলোর চিকিৎসা করাতে পারি না। এখনতো কোনো স্থায়ী পশু ডাক্তার নেই। ডাকলেও আসেন না, এলেও টাকা দাবি করেন। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামের পশুচিকিৎসকদের দ্বারস্থ হচ্ছি। আমাদের খামারে ৮০টির মতো গরু-মহিষ রয়েছে। তাদের সেবা দেওয়া এখন খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। একই অভিযোগ করেন পশুপালক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ৪ দিন ধরে আমার দুটি গরু অসুস্থ। হাসপাতালে কোনো ডাক্তার না থাকায় গ্রামের হাতুড়ি চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। এতে পশুর মৃত্যুঝুঁকি থেকে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা নিরুপায়।
দৌলতপুরে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, বর্তমানে দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র দু’জন দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও প্রকল্পের অধীনে আরও পাঁচজন আছেন। আমরা নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে আসছি। সংকটের কারণে খামারি ও চাষিরা সঠিক সেবা পাচ্ছেন না। অনেকে গ্রাম্য চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আল মামুন হোসেন মন্ডল বলেন, জেলার প্রায় সব উপজেলায় জনবল-সংকট রয়েছে। তবে দৌলতপুরের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। সেখানে বর্তমানে কোনো সার্জন বা স্থায়ী কর্মকর্তা নেই। মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রæত সমাধান হবে। তবে আশ^াস নয়, জরুরী ভিত্তিতে দৌলতপুর উপজেলায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ধরে শুন্য থাকা ভেটিনারি সার্জন (ভিএস) পদে পদায়ন করে দৌলতপুরের প্রান্তিক খামারি ও পশুর চিকিৎসা সংকট লাঘব হবে প্রত্যাশা খামারিদের।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.