মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় শুরু হয়েছে শীতকালীন আগাম সবজি চাষ। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা এখন জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সবুজে ছেয়ে গেছে মাঠ; আগাম পাতাকপি ও ফুলকপি চাষে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি।
শীতকালীন আগাম সবজি চাষ এখন বিরামপুরের কৃষকদের প্রধান আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, জমির উর্বরতা ও কৃষি বিভাগের নিবিড় তদারকির কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি দেশের সবজি বাজারেও বিরামপুরের নাম ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিদিন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বিরামপুর উপজেলায় প্রায় ১২৮০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হেক্টর জমিতে পাতাকপি এবং ৪৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপি রোপণ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১৫৬ হেক্টর জমিতে বেগুন, টমেটো, মুলা ও শিমসহ অন্যান্য সবজির আবাদ চলছে।
পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের চক হরিদাসপুর গ্রামের মৃত সিদ্দিক মন্ডলের ছেলে কৃষক সোহেল রানা জানান, তিনি নিজেই চারা তৈরি করে প্রায় ৫০ শতক জমিতে পাতাকপি চাষ করেছেন। এর পর তিনি ফুলকপি লাগাবেন। তিনি বলেন, আর এক মাসের মধ্যেই কপিগুলো বাজারে বিক্রি করতে পারব। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদি বাজার ভালো থাকে, তাহলে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারব।
সোহেল আরও বলেন, চারা রোপণ থেকে বাজারজাত করতে দেড় থেকে তিন মাস সময় লাগে। বৃষ্টি হলে ফলন তুলতে সময় লাগে কিছুটা বেশি, তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগেই বাজারজাত করা যায়। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে এই সবজি চাষ করে আসছেন এবং প্রতিবছর ২ থেকে আড়াই বিঘা জমিতে আবাদ করেন। উৎপাদিত ফসল কখনও মাঠ থেকেই বিক্রি করে দেন, আবার ভালো দাম পেলে নিজেই বাজারে বিক্রি করেন।
একি ইউনিয়নের চকবসন্ত এলাকার কৃষক নূর ইসলাম জানান, তিনি ১০ কাঠা জমিতে পাতাকপি আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, দেড় মাসের মধ্যে কপিগুলো বাজারে তুলতে পারব। বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়, আর ভালো দাম পেলে ৮০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করা যায়। তিনি আরও বলেন, প্রায় দশ বছর ধরে পাতাকপি ও ফুলকপি চাষ করছেন। নিয়মিত আবাদে এখন তিনি ভালোভাবে লাভবান হচ্ছেন।
এ বিষয়ে পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, ছোট যমুনা নদীর উর্বর পলিমাটি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এই অঞ্চলে সবজির ফলন ভালো হয়। ফলে কৃষকরা প্রতিবছরই লাভবান হন।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ রায় বলেন, বিরামপুর উপজেলাজুড়ে ছোট শাখা যমুনা নদী প্রবাহিত হওয়ায় এখানকার মাটি উর্বর এবং সবজি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। পলিপ্রয়াগপুর, মুকুন্দপুর, কাটলা সহ প্রায় সব ইউনিয়নেই প্রচুর শীতকালীন সবজি আবাদ হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সবজি পাঠানো হয়।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকলে এ বছর আগাম সবজি চাষে ফলন ও লাভ দুই-ই ভালো হবে বলে তারা আশা করছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.