রাসেল আহমেদ, খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা–সাতক্ষীরা মহাসড়ক এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। কার্পেটিং উঠে যাওয়া, অসংখ্য খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা অংশের কারণে সড়কটি প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা—জনদুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে।
মোংলা ও ভোমরা স্থলবন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে প্রতিদিন হাজারো পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী যান চলাচল করে। অথচ রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে তীব্র যানজট ও দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, খুলনার জিরোপয়েন্ট থেকে আঠারোমাইল পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ২০২০ সালে প্রায় ১৩০ কোটি টাকায় কার্পেটিং করা হয়। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকা ও জোবা মাটির ব্যবহারে কিছুদিনের মধ্যেই সড়কটি ভেঙে পড়ে।
সর্বশেষ অর্থবছরে আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দে মাত্র ২৩৫০ মিটার সড়কে কাজ করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে জিরোপয়েন্টে ১১৫০ মিটার এবং চুকনগর এলাকায় ১২০০ মিটার কাজ চলছে, কিন্তু অন্তত ২০ কিলোমিটার রাস্তা এখনো চলাচলের অনুপযোগী।
সওজ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানিমুল হক জানান, “১৭ কিলোমিটার রাস্তা খারাপ, এর মধ্যে সবচেয়ে বাজে ৮ কিলোমিটার। ওই অংশে আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার একটি প্রকৌশল টিম সরেজমিন পরিদর্শনে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
স্থানীয়রা বলছেন, অতীতেও একাধিকবার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। দুর্নীতির কারণে নিম্নমানের কাজ হয়েছে, যা অল্প সময়েই ধসে পড়েছে।
খুলনা নাগরিক সমাজের মহাসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “এই সড়ক শুধু খুলনার নয়, বরং মোংলা, ভোমরা, বরিশাল, ভোলা ও ঢাকার সঙ্গে সংযোগের প্রধান পথ। তাই টেকসই সংস্কার জরুরি।”
খুলনা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি আব্দুস সালাম শিমুল বলেন, “শুধু ঢালাই করলেই হবে না, ফুটপাত ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে রাস্তাটি আবার নষ্ট হয়ে যাবে। সওজকে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।”
সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, ঢাকার টিমের রিপোর্ট জমা হলে নতুন প্রকল্প অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে এলাকাবাসীর একটাই দাবি—দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে যেন টেকসইভাবে সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হয়।