আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের চরখোলাবাড়িয়া গ্রামে মধুমতী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবার। ইতোমধ্যে একটি মসজিদ ও বহু ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ভাঙনের মুখে পড়েছে এলাকার একমাত্র দাখিল মাদ্রাসা — এনবিডিসি আল-হেরা দাখিল মাদ্রাসা — এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর নিবন্ধিত একটি এতিমখানা।
সম্প্রতি মধুমতী নদীর প্রবল স্রোতে ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নদীর স্রোত এখন মাদ্রাসার মূল ভবনের একেবারে পাড় ঘেঁষে প্রবাহিত হচ্ছে। যে কোনো সময় মাদ্রাসা ভবন ও আশপাশের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনের দাপটে মাদ্রাসার চারপাশে মাটি খসে পড়ছে। মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন খান আল্লাহর কাছে মোনাজাত করছেন। চোখে তার জল, কণ্ঠে অসহায়ত্ব— “এই আল-হেরা মাদ্রাসা শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি চরাঞ্চলের শত শত ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের একমাত্র আশ্রয়। বিশেষ করে মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষার একমাত্র কেন্দ্র এটি। আজ নদী আমাদের বুক চিরে নিচ্ছে, আমরা চাই এই শিক্ষালয়টি যেন টিকে থাকে।”
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুর রব ফেসবুক লাইভে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সরকারের সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর সানোয়ার হোসেন বলতেন, সাহায্যের মালিক একমাত্র আল্লাহ। এখন ভাঙনের কারণে সবকিছু হারানোর পথে। যদি দ্রুত জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করা হয়, এই নবীর ঘর বিলীন হয়ে যাবে।”
লাইভে তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন যেন মাদ্রাসা, মসজিদ ও এতিমখানাটি নদীগর্ভে হারিয়ে না যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালেক মোল্লা বলেন, “নদীভাঙনে আমরা ঘরবাড়ি হারিয়েছি, এখন যেন সন্তানদের শিক্ষালয় না হারায়। আল-হেরা মাদ্রাসা রক্ষা মানে আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা।”
সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদ্রাসার নতুন ভবনের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নদীভাঙনের তীব্রতায় ভবনটি নির্মাণের আগেই বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মাদ্রাসার সুপার আব্দুর রব আরও বলেন, “আমরা বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। অন্তত জিও ব্যাগ ফেলে আপাতত ভাঙন ঠেকানো হোক, পরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক। এই প্রতিষ্ঠান হারিয়ে গেলে কয়েকশ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাবে।”
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, “স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের প্রস্তুতি চলছে।”
উল্লেখ্য, এনবিডিসি আল-হেরা দাখিল মাদ্রাসা বুড়াইচ ইউনিয়নের চরখোলাবাড়িয়া এলাকার একমাত্র দাখিল মাদ্রাসা। বর্তমানে এখানে শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে চরাঞ্চলের নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।