কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
শেষ হয়েছে মরমী সাধক ফকির লালন সাঁইজির ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব। রবিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ির মূল মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল হক।
লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আহসান হাবিব ও কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. মো. খালেদউজ্জামান।
উৎসবকে ঘিরে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে বসেছিল বাউল সাধু ও লালন ভক্তদের মিলনমেলা। দেশ-বিদেশ থেকে আগত অসংখ্য বাউল, সাধু, গবেষক ও অনুরাগী অংশ নেন এ উৎসবে। শুক্রবার বিকেলে অধিবাস ও সাধুসঙ্গের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই তিন দিনের উৎসব শনিবার বিকেলে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত হয় বাল্যসেবা ও দৈন্যবানী পরিবেশনা।
সাধুসঙ্গ শেষে বিদায়ের সময় বাউল সাধুদের মধ্যে দেখা দেয় আবেগঘন পরিবেশ। যেতে মন না চাইলেও সাঁইজির ধাম ত্যাগ করতে হয় তাদের। আবার দোল পূর্ণিমা উৎসবে মিলনের প্রত্যাশায় তারা ফিরে যান নিজ নিজ ধামে।
বছরে দুটি বড় উৎসব—দোল উৎসব ও তিরোধান দিবস—উপলক্ষে মুখর হয়ে ওঠে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি। তবে এবছর রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হলেও দর্শনার্থীদের ভিড়ে সাধুসঙ্গের আচার-অনুষ্ঠানের রীতিতে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানান অংশগ্রহণকারীরা।
সাঁইজির ধামে আগত সাধু আরোজ শাহ বলেন, “সাঁইজির কৃপা দর্শন নিয়ে আমরা ফিরছি, তবে বিদায়বেলায় মন ভারাক্রান্ত। আবার দোল উৎসবে মিলন ঘটবে, সেখানেই হবে আত্মশুদ্ধি।”
লালন গবেষক সাইমন যাকারিয়া বলেন, “রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎসব পালন অবশ্যই আনন্দের, তবে সাধুসঙ্গের ঐতিহ্য রক্ষায় আখড়াবাড়ির আঙিনা সাধুদের জন্য সংরক্ষিত রাখা উচিত।”
অনুষ্ঠানের শেষে লালন একাডেমির শিল্পী ও দেশবরেণ্য লালনগীত শিল্পীরা সাঁইজির গান পরিবেশন করেন। ভাব-সঙ্গীত ও আধ্যাত্মিকতার এই আবেশে শেষ হয় এবারের লালন স্মরণোৎসব।