নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আচারগাঁও ফাজিল মাদ্রাসার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এখন আদালতে গড়িয়েছে। মাদ্রাসার সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চান এবং অধ্যক্ষ মো. আবদুল হাইসহ আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে নান্দাইল সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের হয়েছে ২০২৫ সালের মোকদ্দমা নং-২৬১/২০২৫ হিসেবে।
মামলার বাদীরা হলেন মাদ্রাসার সহ-সভাপতি হান্নান মিয়া, বিদ্যোৎসাহী সদস্য আশিকুর রহমান, দাতা সদস্য সাইফ উদ্দিন খান, অভিভাবক সদস্য ফজলুল করিম এবং আশিকুর রহমান (কাজল)। তাঁরা অভিযোগ করেন, মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ, ইবতেদায়ী প্রধান, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর—এই চারটি শূন্য পদে নিয়োগে চরম অনিয়ম ও গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, গভর্নিং বডির বৈধ সদস্য হয়েও বাদীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও আবেদনকারীদের সংখ্যা, বাছাই কমিটি বা সাক্ষাৎকার সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাঁদেরকে জানানো হয়নি। তাঁরা অভিযোগ করেন, সভাপতি ও অধ্যক্ষ মিলে নিজেদের ইচ্ছামতো ‘পকেট কমিটি’ তৈরি করে গোপনে প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।
বাদীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে তাঁরা নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাইলে সভাপতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, “এ বিষয়ে জানার কোনো অধিকার তাঁদের নেই এবং কমিটি নিজেদের মতো করে নিয়োগ দেবে।” এ ঘটনায় তাঁরা মনে করছেন, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ, বেআইনি ও ষড়যন্ত্রমূলক।
অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছেন, আচারগাঁও ফাজিল মাদ্রাসা একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সভাপতির একাধারে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন ও নিয়োগ নিয়ে বিতর্কিত ভূমিকায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, বর্তমান সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চান একই সঙ্গে নান্দাইল সমুর্ত্ত জাহান মহিলা কলেজের এডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। তবে অজ্ঞাত কারণে সরকারি বিধিমালা অনুসরণ না করে মাদ্রাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চান সাংবাদিকদের বলেন, “নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছে। কেন মামলা হয়েছে, তা আমার জানা নেই।”
অন্যদিকে, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আবদুল হাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ অবস্থায় মাদ্রাসার নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। মামলার বাদী ও অভিভাবক সমাজ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করে বলেন, নিয়োগে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং বিধি-বিধানের যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।