পটুয়াখালী প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে জুলাই বিপ্লবের শহীদ জসিম উদ্দিনের কলেজ পড়–য়া কিশোরী কন্যা (মোসাঃ লামিয়া) (১৭) সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার মোঃ সাকিব মুন্সী (১৭), মোঃ সিফাত মুন্সী (১৭) ও ইমরান মুন্সি (১৭) এই তিনজন আসামিকে ১০ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়াও এই মামলায় পর্ণোগ্রাফী আইনে সাকিব মুন্সি ও সিফাত মুন্সীকে আরো তিন বছর করে কারান্ডদের আদেশ দিয়েছে আদালত।
আজ বুধবার বেলা ১১ টার দিকে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক নিলুফার শিরিন আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি বলেন, এই মামলাটি বহুল আলোচিত মামলা। অভিযোগ পত্রে এই মামলায় তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
১৬ জনের স্বাক্ষী শুনানী শেষে আজকে আদালত রায় প্রদান করেছে। রায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ৩ ধারায় তিনজনকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়। যেহেতু অভিযুক্তরা শিশু । তাই শিশু আইনের বিধান অনুয়ায়ী এই দন্ডাদেশ দেওয়া হয়। মামলায় সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সী এই দুইজনকে পর্ণোগ্রাফী আইনে আরো তিন বছর করে কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একটির পর একটি এই সাজা কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে আলেঅচিত এই মামলার রায়কে ঘিরে সকাল থেকে আদালন প্রঙ্গনে কঠোর নিরাত্তার নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আসামিদের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে নিয়ে আসা হয়। মামলার রায় শোনার জন্য আদালত প্রাঙাগনে উৎসুক মানুষের ভিঢ় লক্ষ্য করা গেছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মৃতঃ মোঃ জসিম হাওলাদারের মেয়ে মোসাঃ লামিয়া (১৭)। সে দুমকি সরকারী জনতা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত । মামলার বিবাদীরা পূর্ব পরিচিত। ০২ নং বিবাদী মোঃ সিফাত মুন্সী তার সহপাঠি।
চলতি বছর ১৮ মার্চ লামিয়া তার দাদা বাড়ীতে গিয়ে পিতার কবর জিয়ারত শেষে সন্ধ্যা পৌনে ৬ টার দিকে নানা বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাত আনুমানিক সাড়ে ৭ টার দিকে লামিয়া তার মা মা মোসাঃ রুমা বেগমের (৩৭) সাথে মোবাইলে কথা বলা অবস্থায়পায়ে হেটে দুমকির পাঙ্গাশিয়ার আলগী ০১ নং ওয়ার্ডের মৃত জলিল মুন্সির বাড়ীর সামনে সড়ক অতিক্রম করছিল।
এসময় বিবাদীরা লামিয়ার অজ্ঞাতসারে তাকে অনুসরন করে এবং কিছুক্ষন পর সামনে এসে লামিয়ার দুই হাত ও মুখ চেপে ধরে। এক পর্যায়ে পাশের একটি গাছের বাগানের মধ্যে নিয়ে প্রথমে মোঃ সাকিব মুন্সী (১৭) ও পরে মোঃ সিফাত মুন্সী (১৭) লামিয়াকে ধর্ষন শেষে বিবস্ত্র অবস্থায় একাধিক ছবি তোলে।
ধর্ষন শেষে বিষয়টি কাউকে না জানানোর হুমকি দেয় এবং যখন ইচ্ছা হবে তখন তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, যদি রাজি না হই তাহলে লামিয়ার তোলা উলঙ্গ ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে দিবে বলে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত চলে যায়।
এর পর ঘটনার আশপাশে কোন লোকজন না দেখে লামিয়া তার নানা বাড়ি চলে যায় এবং বিষয়টি তার মাকে জানায়।
এদিকে লামিয়া ঘটনাটি তার স্বজনদের সাথে কথা বলে এবং সাময়িক সুস্থ হয়ে পরদিন দুমকি থানায় লামিয়া নিজে বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সজ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করে।
এই মামলায় দুমকির নলদোয়ানী গ্রামের মৃত মামুন মুন্সীর ছেলে মোঃ সাকিব মুন্সী(১৭) ও একই গ্রামের সোহাগ মুন্সীর ছেলে মোঃ সিফাত মুন্সী(১৭) নামে দুইজনকে আসামি করা হয়।
আলোচিত এই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান দুমকি থানার ইনচার্জ তদন্ত মো. রফিকুল ইসলাম। মামলাটি তদন্তকালে তিনি এই ঘটনায় তিনজনের সংস্পৃক্ততা পান এবং ১ মে আদালতে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে আদালতে ১৬ জনের স্বাক্ষী শুনানী শেষে আজ বুধবার আদালত বহুল আলোচিত এই মামলার রায় দেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার বাসা থেকে জুলাই আন্দোলনের শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরআগে জসিম হাওলাদার গত বছরের ১৯ জুলাই আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ১০ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।