রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা জেলা কারাগারে বন্দিদের লাগামহীন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। কারাগারের ভেতর থেকেই চলছে চাঁদাবাজি, মাদক লেনদেন, সংঘর্ষ আর মোবাইল ফোনে নির্দেশনা। একের পর এক অভিযান, স্থানান্তর ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও থামছে না অপরাধচক্র।
গত ২ জানুয়ারি খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) গ্রেপ্তার করে শীর্ষ সন্ত্রাসী নূর আজিমকে। তাকে রাখা হয় জেলা কারাগারের বিশেষ সেলে। কিন্তু সেখান থেকেই নগরীর টুটপাড়া ও চানমারী এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে সেলে অভিযান চালিয়ে মোবাইল ফোন ও মাদক উদ্ধার করে কারারক্ষীরা। পরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নূর আজিমকে পাঠানো হয় ঢাকার কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে।
একইভাবে চরমপন্থি নেতা শাহাদাত হোসেন লিটন ওরফে খোঁড়া লিটনের বিরুদ্ধেও উঠে আসে অভিযোগ। হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি লিটন কারাগারে বন্দি থেকেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ফোনে যোগাযোগ রেখে টাকা দাবি করছিলেন বলে জানা যায়। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলে তার কাছ থেকেও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ। পরে তাকেও কাশিমপুরে স্থানান্তর করা হয়।
সূত্র জানায়, খুলনা কারাগারে কেবল নূর আজিম বা খোঁড়া লিটন নয়— আরও অনেক বন্দি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। কখনও মাদক সেবন, কখনও চাঁদাবাজি, আবার কখনও মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছেন তারা। শাস্তি হিসেবে সেলে বন্দি রাখা বা সাক্ষাৎ বন্ধ করা হলেও কিছুদিন পর আবারও পুরোনো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন এসব বন্দি।
গত বছরের ৬ অক্টোবর যৌথ বাহিনী ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিকের ভাই সজিব ইসলামকে। কারাগারে বন্দি অবস্থায় তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় আরও ১৯ পিস ইয়াবা। খুলনার আরেক সন্ত্রাসী সাগর বিশ্বাস ওরফে হাড্ডি সাগরের কাছ থেকেও গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
এ বছরের ২৯ মার্চ রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ পলাশ, রুবেল হোসেন লাভলু ওরফে কালা লাভলুসহ ১১ জনকে। অভিযানে পুলিশের গুলিতে আহত হন পলাশ। আদালতের অনুমতিতে তিনি ঢাকায় চিকিৎসা নিতে যান এবং ২৪ এপ্রিল খুলনায় ফিরে আসেন। এ সময় গ্রেনেড বাবু ওরফে রনি চৌধুরীর ভাই রাব্বি চৌধুরীকেও অস্ত্রসহ আটক করে যৌথ বাহিনী। সম্প্রতি রাব্বিকে মাদক দিতে এসে কারা ফটকে আটক হয় এক যুবক। এর আগেও গ্রেনেড বাবুর সহযোগী তাওহিদুল ইসলাম তুহিন ওরফে কালা তুহিনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছিল যৌথ বাহিনী।
এদিকে, ১৮ অক্টোবর খুলনা কারাগারে বন্দিদের দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কারারক্ষীরা লাঠিচার্জ ও পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জানা যায়, ১১ আগস্ট আদালত চত্বরে গ্রেনেড বাবুর অনুসারীদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে চাপাতি নিয়ে গিয়েছিল মানিক হাওলাদার নামে এক যুবক। সেই ঘটনার জেরে পলাশ গ্রুপ ও গ্রেনেড বাবু গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
খুলনা কারাগারের জেলার মুনীর হোসাইন বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত কালা তুহিন, রাব্বি চৌধুরী ও জিতুকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরে পলাশ, কালা লাভলু, ইমরানুজ্জামান রাসেল ও পার্থকেও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ স্থানান্তর করা হয়।”
তিনি আরও জানান, “এর আগে মোবাইল ফোন উদ্ধারের ঘটনায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামিকে অন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ডিভিশন পাওয়া খুলনা-৫ ও ৬ আসনের সাবেক দুই এমপিকেও যশোর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।”
১৯১২ সালে নির্মিত খুলনা জেলা কারাগারের ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জন। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত সেখানে বন্দি ছিল ১ হাজার ৪৫১ জন।
জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, “প্রায় শত বছরের পুরোনো এই কারাগারের চারপাশে বড় বড় ভবন ও সড়ক রয়েছে। সেসব ভবন থেকে কাগজের টুকরো বা ছোট ঢিল ছুড়ে মাদক ভেতরে ফেলা হয়। কেউ কেউ শরীরের ভেতর লুকিয়ে মাদক নিয়ে আসে। এসব রোধে কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “শাস্তির পাশাপাশি বন্দিদের অপরাধ প্রবণতা কমাতে নিয়মিত মোটিভেশন দেওয়া হচ্ছে। সতর্কতাও জোরদার করা হয়েছে। কয়েকজনকে অন্য কারাগারে পাঠানোর পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।”
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.