আবিদ হাসান, হরিরামপুর,( মানিকগঞ্জ ) প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ- কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কৃষকদের কাছে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। আর অতিরিক্ত মুল্য দিলেই মিলছে সার। সারের এমন সংকটে অনেক কৃষক খালি হাতে ফিরছে বাড়ি, এমনকি সারের কৃত্রিম এমন সংকটে কৃষি কাজের প্রতি অনিহা বাড়ছে নিয়মিত।
এছারাও সাপ্লাই কম বলে সারের এমন সংকট হয়েছে বলে অনেক ডিলার জানিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী ক্যাশ মেমো দিয়ে সার বিক্রি করার কথা থাকলেও তা মানছেন না অনেক ডিলার। আর ক্যাশমেমোতে সারের সঠিক দাম লিখে দিলেও আলাদা অতিরিক্ত মুল্য দিতেও বাধ্য হচ্ছে অনেকেই। অভিযোগ রয়েছে, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন ডিলাররা। আর অপ্রয়োজনীয় কিটনাশক জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কিটনাশক না নিলে বাড়তি আরও ২০০ টাকা জোর করেও নিচ্ছে বলে জানা গেছে। উপজেলার চরাঞ্চলে সারের বেশি চাহিদা বলে স্ব-স্ব ইউনিয়নে ডিলার থাকতেও ঝিটকা,আন্ধারমানিক,লেছড়াগঞ্জ, কান্ঠাপাড়া বাজার থেকেও বাধ্য হয়ে সার কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে পরিবহন খরচ বাড়ছে কৃষকদের। উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা বলছে- সারের তেমন সংকট নেই।
গত কয়েদিনে সরেজমিনে উপজেলার বাল্লা, হারুকান্দি,লেছড়াগঞ্জ,সুতালড়ি চর,আজিমনগরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সারের এমন সংকটে অনেক কৃষকই ঘড়ে বসা অবস্থায় অন্য পেশার খোজ করছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ শিকার করছেন। কয়েকজন ডিলারের সিন্ডিকেট আর লুটপাটে অসহায় কৃষকের আর্তনাদ যেন কেউ দেখার নেই। অথচ উপজেলা ভিত্তিক প্রতি ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সারের খুচরা ডিলার থাকলেও বড় ডিলারদের সিন্ডিগেটে খুচরা ডিলাররা অসহায় আর লুটপাটের কাছে হেরে যাচ্ছে।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রামের কৃষক লাভলু মোল্লা জানান, ২০০ বস্তা সারের প্রয়োজন তার। অনেক অনুরোধ আর অতিরিক্ত মুল্যে ৫০ বস্তার কাছাকাছি সার কিনেছেন তিনি। প্রতিবস্তা ইউরিয়া সারের ১৩৫০ টাকা সরকারি মুল্য থাকলেও আজ আমি ঝিটকা বাজার থেকে অতিরিক্ত দামে সার কিনলাম। এরকম ঝিটকা বাজারে গত কয়েকবছর যাবৎ চলছে নিয়মিত।
লেছড়াগঞ্জের আরেক কৃষক নিলা হাজি বলেন, ডিএপি,এমওপি,টিএসপি সার কিনতে ডিলারদের কাছে সিরিয়াল দিয়ে এলাম। তিন চারদিন পর দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। টাকা দিয়ে সার কিনবো, তাও আবার সিরিয়ালে থাকতে হবে।
মৌসুমের শুরুতেই স্থানীয় বাজার থেকে সরকারি দামের চেয়ে কেজি প্রতি ২ থেকে ৫ টাকা বেশি আর অতিরিক্ত পরিবহণ খরচ দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে অনেক কৃষকেই, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
লেছড়াগঞ্জ চরের আরেক কৃষক এনায়েত বলেন, ঝিটকা বাজারের বেশ কয়েকজন সারের ডিলারেরা আমাদের জিম্মি করে গত এক বছরেই কোটিপতি হয়ে গেছে। তারা ঘাম ঝরানো অসহায় কৃষকের রক্ত চুষে খাচ্ছে। দেখার কেউ নেই।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুজ্জামান জানান, যার ১৫/২০ দিন পর সার লাগবে, তারা আগেই কিনে জিইয়ে রাখছে, তারজন্য একটা চাপ পরছে। ইউরিয়া,পটাশ সারের তেমন সমস্যা নাই। ডিএপি আর টিএসপির একটু চাহিদা আছে। ডিএপি সার যথেষ্ট পরিমান বরাদ্দ আছে। টিএসপি আমার এখানে কম আছে। চরে প্রচুর সার লাগে, যে ইউনিয়নগুলোতে চাষবাষ শুরু হয়নাই, সেসব ইউনিয়নের সার চরে পাঠিয়ে যার যকটুকু প্রয়োজন মেকআপ করার চেষ্টা করতেছি।
চরে অনেক বড় কৃষক আছে, তাদের চাহিদা মেটাতে হয়, আবার নরমাল কৃষকদের চাহিদা মেটাতে হয়। সংকট বিষয়টা এমন না। আজকে কৃষক সার না পেলে কালকে পাবে। আগামী মাসের বরাদ্দ আর এই মাসের চাহিদা অনুযায়ী সংকট মিটে যাবে। আর চরে যারা ডিলার আছে, তারা পরিবহন খরচ সমন্বয় করতে কৃষকদের কাছে একটু বেশি রাখে হয়তো। চরে যারা কৃষক আছেন, তারা যে কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এছারা, আপনার মাধ্যমে ৫/৭/১০ জন কৃষকের যদি সার লাগে, তবে আমি ডিলারদের ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। আর অনেক এমনটি করে, তবে কৃষকদের কাছে আমার নাম্বারটা দিয়ে দিবেন, আমি ব্যবস্থা করে দেবো। ইমাজেন্সি যাদের সার লাগবে, তারা আমাকে জানালে তাদেরও সার ব্যবস্থা করে দেবো। কৃষকদের আশ্বস্ত করেন, সারের সংকট নেই।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার মুঠোফোনে বলেন, তাহলে মনে হয় এটা আমাদেরই ব্যর্থতা যে, আমাদের কাছে ডিরেক্ট না এসে আপনাদের বলছে। উনাদেরকে বলেন আমার কাছে একটা অভিযোগ দেয়ার জন্য। কোন জায়গা থেকে স্পেসিফিক কার কাছ থেকে কোন ডিলারের কাছ থেকে তাদেরকে বেশি মুল্য দিতে হচ্ছে, সেটা যদি আমাদের কাছে বলে, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

