রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
১১৩ বছরের পুরনো ইতিহাসকে পেছনে ফেলে নতুন ঠিকানায় কার্যক্রম শুরু করল খুলনা জেলা কারাগার। রূপসা সেতুর বাইপাস সড়কের পাশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নতুন কারাগারে শনিবার প্রথম ধাপে ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পুরনো কারাগার থেকে নতুন কারাগারের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. নাসির উদ্দিন প্রধান জানান, নতুন কারাগারে ইতিমধ্যেই ৮৩ জন কারারক্ষী এবং একজন ডেপুটি জেলা নিয়োগ পেয়েছেন। তবে নতুন সুপার ও জেলার নিয়োগ না হওয়ায়, তিনি ও জেলার অন্যান্য কর্মকর্তা দুই কারাগারের দায়িত্বে থাকবেন।
প্রথম ধাপে বন্দিদের স্থানান্তর ২৫ অক্টোবরের জন্য নির্ধারিত ছিল, কিন্তু নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় এক সপ্তাহ পিছিয়েছে। মাটি ভরাটসহ কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকলেও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলার মুনীর হোসাইন জানান, পর্যায়ক্রমে আরও বন্দি নতুন কারাগারে নেওয়া হবে। পাশাপাশি যশোর জেল থেকেও কিছু সাজাপ্রাপ্ত বন্দি স্থানান্তর করা হবে, যা খুলনা ও যশোরের কারাগারের চাপ কমাবে।
নতুন কারাগারটি সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে বন্দিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, মানসিক মোটিভেশন ও কর্মসংস্থান সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। ফলে সাজা শেষে তারা সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।
ভবিষ্যতে নতুন কারাগারটি জেলার কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। পুরাতন ভৈরব নদীর তীরবর্তী কারাগারটি মেট্রোপলিটন কারাগার হিসেবে থাকবে। সরকারের নীতিমালার আওতায় দুই কারাগার আলাদাভাবে পরিচালিত হবে।
পুরাতন কারাগারটি ১৯১২ সালে নির্মিত। বন্দির ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৬৭৮ জন, কিন্তু বর্তমানে দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে। নতুন কারাগারে আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে; ভবিষ্যতে ৪ হাজার বন্দির জন্য অবকাঠামো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
নতুন কারাগারের সুবিধা অত্যাধুনিক। এখানে রয়েছে পৃথক ব্যারাক, নারী ও শিশু বন্দিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল ও ডে-কেয়ার, হস্তশিল্প ও ওয়ার্কশেড, বিনোদনকেন্দ্র, নামাজঘর, গ্রন্থাগার, স্কুল, খাবার কক্ষ, সেলুন, লন্ড্রি, ওয়াকওয়ে, সৌর বিদ্যুৎ, দুইটি পুকুর ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা। প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে আলাদা সীমানাপ্রাচীর থাকায় এক শ্রেণির বন্দি অন্য শ্রেণির সঙ্গে মেশবে না।
নতুন কারাগারের নির্মাণ প্রকল্প ২০১১ সালে একনেকের অনুমোদন পায়। মূল ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা, পরে প্রকল্প সংশোধন হয়ে ২০২৩ সালে ব্যয় বেড়ে ২৮৮ কোটি টাকা হয়। নির্মাণ শুরু হয় ২০১৬ সালে এবং কয়েকবার সময় বৃদ্ধির পর ২০২৫ সালে কার্যক্রম শুরু হলো।
নতুন কারাগার চালু হওয়ায় খুলনার বন্দিদের জন্য নিরাপদ, আধুনিক ও কার্যকর পরিবেশ নিশ্চিত হবে।

